সরকারি স্কুলে ভর্তি আবারও লটারি, কোটা নিয়ে অভিভাবকদের অসন্তোষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:২৫, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
সরকারি স্কুলে ভর্তিতে এবারও লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। তবে লটারি প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা ও কোটা ব্যবস্থাকে ঘিরে অভিভাবকদের মধ্যে শঙ্কা বেড়েছে। ভালো স্কুল পাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগও কম নয়।
প্রকাশিত ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, এবারও ৬৩ শতাংশ কোটা বণ্টন নীতি বহাল থাকছে। এর মধ্যে ক্যাচমেন্ট এরিয়া কোটা ৪০ শতাংশ, যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আপত্তি জানিয়েছেন অভিভাবকেরা। বিশেষত কর্মসূত্রে ঢাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী পরিবারগুলো এ কোটা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ, ক্যাচমেন্ট কোটা পেতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র নিতে হয়। ভাড়াটিয়া হলে এ প্রক্রিয়ায় পড়তে হয় সীমাহীন ভোগান্তিতে। শুধু তাই নয়, অনেকে অনলাইনে ভুল তথ্য দিয়ে সুবিধাজনক এলাকার নাম ব্যবহার করেন এবং লটারিতে টিকে গেলে টাকা দিয়ে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেন—এমন অভিযোগও রয়েছে।
রাজধানীর মালিবাগের ভাড়াটিয়া বাসিন্দা ফাহমিদুল হক জানান, গত বছর ক্যাচমেন্ট কোটার জটিলতায় তিনি সন্তানের পছন্দের স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি। তার অভিযোগ, ‘অনেকে ভিন্ন এলাকার বাসিন্দা হয়েও অনলাইনে ক্যাচমেন্ট এলাকার সুবিধাজনক জায়গা দেখান। পরে টাকা দিয়ে প্রত্যয়নপত্র এনে নেন—এটা জালিয়াতি ছাড়া কিছুই না।’
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি বলছে, বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও শিক্ষার্থীদের নিজ মহল্লার স্কুলে পড়ার সুযোগ দিতে ক্যাচমেন্ট কোটা রাখা জরুরি। বাকি কোটাগুলো খুবই কম শতাংশের বলে তাদের দাবি।
নীতিমালা অনুযায়ী, অন্য কোটাগুলো হলো—
- মুক্তিযোদ্ধা কোটা: ৫%
- শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীন দপ্তর/সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান: ১%
- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী: ১০%
- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী: ২%
- অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর যমজ ও সহোদর: ৫%
- ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ১০% আসন রাখতে হবে।
অলিখিতভাবে আরও একটি কোটা প্রচলিত আছে—দূর থেকে বদলি হয়ে আসা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানের জন্য ৫ শতাংশ সংরক্ষিত আসন। সরকারি স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের সন্তানরাও বিশেষ সুবিধার আওতাভুক্ত।
মাউশির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের জন্য যে কোটা রাখা হয়েছে, তা খুবই কম হলেও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’ ক্যাচমেন্ট কোটায় জালিয়াতির অভিযোগ সত্য বলে উল্লেখ করে তিনি নিয়ম কড়াকড়িভাবে প্রয়োগের পরামর্শ দেন।
মাউশির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বি এম আব্দুল হান্নান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সভার মাধ্যমে নীতিমালা নির্ধারণ হয়েছে। লটারিতেই ভর্তি হবে। ভবিষ্যতে কোনো আপত্তি এলে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
