রাইডে উঠতে বাধা, ওজন কমালেন নারী
প্রকাশ: ০০:৩০, ২৩ আগস্ট ২০২৫

অতিরিক্ত ওজনের কারণে এক মাকে বিনোদন পার্কের রাইডে উঠতে বাধা দেয়া হয়েছিলো। তার দুই সন্তানকে উঠতে দিলেও তাকে উঠতে দেওয়া হয়নি। তাই রাগ করে তিনি এক বছরে ৪৬ কেজি ওজন কমিয়েছেন। এখন তিনি পুরোপুরি ফিট।
মুনজারো বা ওজেম্পিক ছাড়াই তিনি কাঙ্খিত ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছেন। ওই তরুণী বলেছেন, তার ওজন ছিল ১১৬ কেজি। পোশাকের আকার ছিলো ২২। কিন্তু এখন তিনি ১০ সাইজের পোশাক পরতে পারেন।
ডেইলি মেইল জানায়, ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কাউন্টি চেশায়ারে বাস করেন এই তরুণী। তার নাম ভেনেসা গ্রেগরি। তার বয়স এখন ২৯ বছর। তিনি দুই সন্তানের মা। বড় ছেলে জ্যাকবের বয়স ৭ ও জর্জের ৩ বছর। ভেনেসা শৈশব থেকেই একটু স্বাস্থ্যবতী ছিলেন। কিন্তু ছোট ছেলে জন্মের পর তার ওজন বেড়ে যায়।
২০২২ সালে তার সঙ্গী ড্যারেন ও তাদের দুই ছেলেকে নিয়ে নর্থ ওয়েলসে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। সেখানে এক বিনোদন পার্কে গেলে ছেলেদের সাথে তাকে রাইডে উঠতে বাধা দেন সেখানকার কর্মীরা।
তারা তাকে বলেন, তোমার ওজন ছোট ছেলেদের সাথে চড়ার জন্য খুব বেশি। তখন তিনি খুব হতাশ হয়ে পড়েন।
ভেনেসা সেই মুহূর্তে বুঝতে পারেন তাকে পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি বলেন, মোটা হওয়ায় আমি আমার বাচ্চাদের সাথে দৌঁড়াতে ও সুইংয়ে যেতে পারছিলাম না।
কিন্তু মেলার মাঠের সেই মুহূর্তটি ছিলো আমার জীবনে বড় এক মোড়।
আমি বুঝতে পারিনি যে আমি কতোটা মোটা। অপমানিত হয়ে সেখান থেকে চলে এসেছিলাম, কিন্তু নিজেকে পরিবর্তনের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম, জানান ভেনেসা।
ওজন কমাতে তিনি খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনলেন। যখন তার ওজন বেশি ছিলো, তখন তিনি উচ্চ ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার খেতেন।
সকালের নাস্তায় জ্যাম দিয়ে টোস্ট খেতেন। দুপুরে খেতেন স্যান্ডউইচ, ক্রিসপস ও চকলেট। রাতে খেতেন ওভেন চিপস, প্রক্রিয়াজাত মুরগি, পেঁয়াজের রিং ও পিৎজা। এর বাইরেও খেতেন চকলেট, ক্রিসপস, ফিজি ও ড্রিঙ্কস।
যখন তার ওজন কমে ৭০ কেজি হল এবং ১০ সাইজ পোশাক পরতে পারতেন, তখন তিনি আরেকটি খাদ্য তালিকা তৈরি করলেন। সকালে প্রোটিন বার। দুপুরে অমলেট ও সালাদ এবং রাতে খেতেন স্টার ভাজা, চিংড়ি ও সালাদ। তিন বেলা খাবারের মাঝখানে খেতেন প্রোটিন বার।
ভেনেসা বলেছেন, আমার ডায়েট ছিলো খুবই খারাপ। আমি কার্বোহাইড্রেটের উপর খুব বেশি নির্ভর করতাম। মাখনে ভিজিয়ে সাদা টোস্টের তিন টুকরো খেতাম।। তারপর বাচ্চাদের অবশিষ্ট খাবার নাস্তায় খেয়ে ফেলতাম।
আমি পেস্ট্রি, রুটি, পাই ও চকলেট পছন্দ করতাম।
ওভেন চিপস, পেঁয়াজের রিং ও পিৎজার মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতাম। এর বাইরেও মাঝখানে খাবার থাকতো।
তিনি বলেন, রাইডে উঠতে না পেরে আমি খুব লজ্জা পেয়ে চলে গিয়েছিলাম। আমি কতোটা মোটা ছিলাম তা আমাকে আঘাত করেছিলো। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত আমি ওজন কমানোর চেষ্টাও করিনি। আমি এটাকে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখিনি।
আমার চেহারা অথবা আমার রুক্ষ পোশাক পছন্দ ছিলো না। কিন্তু আমি তা মেনে নিয়েছি।
তারপর ভেনেসা ২০২৩ সালের শুরুর দিকে ম্যানচেস্টারের একটি স্লিমিং ক্লাব বিওয়েইডে যোগ দেন। তিনি তার ওজন কমানোর যাত্রা শুরু করেন। কঠোর সাধনায় তিনি এক বছরে ৪৬ কেজি ওজন হারিয়েছেন। পোশাকের আকার ১০-এ নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, এই দলটি মানুষকে শরীরের ভেতরে ও বাইরে কী ঘটছে, তা বিবেচনা করতে উৎসাহিত করে। আমি দেখেছি, এটি সত্যিই সাহায্য করেছে, কেন আমার স্বাস্থ্যকর জীবন পছন্দ করা উচিত তা জেনে।
শুরুর দিকে আমি সকাল ১১টা পর্যন্ত না খেয়ে থাকতাম। তারপর আমি খাবারের নতুন তালিকা অনুসরণ করতাম। প্রতিদিন পানি খেতাম দুই লিটার। প্রথমে এটা আমার কাছে ছিলো এক কঠিন যাত্রা। ওজন কমার পর পুরো পরিবার আমার সাথে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে শুরু করে।
সেপ্টেম্বরে আমি আমার তিন বোনের সাথে টেনেরাইফে গিয়েছিলাম। সবাই ছিলো হালকা পাতলা। আমি এতো গর্বিত বোধ করেছি যে অবশেষে আমি আত্মবিশ্বাসের অভাব ছাড়াই বিকিনি পরতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আমার ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো দিক হলো আমার আত্মবিশ্বাস। আমি আমার পছন্দের পোশাক পরতে পারি, কেবল মানানসই পোশাক নয়। সবাই বলে এখন আমাকে অনেক কম বয়সী দেখায়।
বাচ্চারা এখন আমার নতুন চেহারা পছন্দ করে। কারণ তাদের সাথে খেলতে ও দৌঁড়াতে আরও বেশি শক্তি পাই। আমি যখন পার্কে যেতাম তখন আমি কেবল একটি বেঞ্চে বসে তাদের খেলা দেখতাম।
ড্যারেন আমার উপর সত্যিই গর্বিত। এবং আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত।
ভেনেসা বলেছেন, ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, এমন সবার প্রতি আমার পরামর্শ হলো, ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, অন্যদের সাথে আপনার ওজন কমানোর তুলনা করবেন না এবং নিজেকে প্রথমে রাখুন।
আপনি নিজের যত্ন যেভাবে নিতে পারবেন, তেমন করে অন্য কেউ আপনার যত্ন নিতে পারবে না। পার্কের সেই দিনটিতে আমার সত্যিই ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো।
আমি এখন ওই পার্কে ফিরে গিয়ে সেই পরিচারককে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যিনি আমাকে রাইডে চড়তে বাধা দিয়েছিলেন। কারণ তিনি আমার জীবন বদলে দিয়েছেন। সেদিন তিনি যদি আমাকে বাধা না দিতেন, হয়তো আমি ওজন কমানোয় উদ্যোগী হতাম না।
স্থূলতা একটি রোগ। বিশ্বজুড়েই স্থূলতার হার বেড়ে চলেছে। স্থূলতা দীর্ঘমেয়াদী হলে শরীরে নানা রোগ বাসা বাধতে পারে। তাই সঠিক পদ্ধতিতে ও চিকিৎসকের পরামর্শে ওজন কমানো উচিত। কারণ ভুল পদ্ধতিতে ওজন কমানোর উদ্যোগ নিলে কখনো কখনো তা মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।