ডিভোর্স হলো তানিয়ার আশীর্বাদ!
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:৪০, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

তানিয়া ভাবতেই পারেননি, ডিভোর্স তার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসবে। অতিরিক্ত মোটা হওয়ার কারণে স্বামী তাকে তালাক দিয়েছিলেন। তার উপর গর্ভপাত হওয়ায় হতাশায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লিমোরের বাসিন্দা ৩১ বছরের তরুণী তানিয়া সান্তিয়াগো ডিভোর্স হওয়ার পর শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য কঠিন শপথ নেন। তার ওজন হয়েছিলো ২৭০ কেজি। গত তিন বছরে ১৯০ কেজি কমিয়ে, এখন তার ওজন ৮০ কেজি।
২০২১ সালটা তার জীবনে খুবই কঠিন ছিলো। স্থূলতা বা ওবেসিটির কারণে সেভেন এক্স এল পোশাকও তার ছোট হতো। শরীর এতো ভারী হয়েছিলো যে বিছানা থেকেও তিনি একা উঠতে পারতেন না। ছয় জনের খাবার একাই খেতেন। এই অবস্থায় তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। কিন্তু তিন মাসের মাথায় আসে দুঃসংবাদ। গর্ভপাত হয়ে যায় তার। সন্তান হারানোর বেদনা সামলে ওঠার আগেই স্বামীর সঙ্গে হয় বিচ্ছেদ। তার মাথায় তখন ঘুরছিলো, তিনি কি আর কখনও মা হতে পারবেন? এর পরই নিজের জীবন পুরোপুরি বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
কিন্তু এরপর ফের একটি দুঃসংবাদ আসে। ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানান, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্যানসার হতে পারে।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাইপাস অস্ত্রোপচার হয় তানিয়ার। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতাও দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে।
দ্য সানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তানিয়া জানিয়েছেন, নিজের চেহারায় এতোটাই বদল হয়েছে যে একদিন তার চাচাতো বোন শপিং মলে তাকে দেখে চিনতেই পারেননি।
এদিকে, কিছুদিন আগেই মনের মানুষও খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তিনিও তানিয়ার কাহিনি শুনে হতভম্ব। এমনকী তানিয়ার আগের ছবি দেখেও তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে কোনও মানুষ এতোটা বদলে যেতে পারেন।
তানিয়া জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি হাঁটা, সাঁতার কাটা এবং এর কিছুদিন পর জিমে যাওয়া শুরু করেন।
এখন তিনি ছোট আকারের পোশাকও পরতে পারেন। এবং তার সঙ্গী, ২৭ বছরের গ্যাব্রিয়েলের মধ্যে নতুন ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছেন।
পেশাগত জীবনে তানিয়া একটি সুপার শপের ম্যানেজার। তানিয়া বলেন, 'আমি অবাক হই যে আমি এখন দৌড়াতে পারি এবং এখন আমার অনেক বেশি শক্তি আছে।'
দৈনন্দিন খাবার সম্পর্কে তানিয়া জানিয়েছেন, 'আগে আমি হাতের কাছে যা পেতাম, তাই খেতাম। আমার পছন্দের ছিলো চাইনিজ আর মেক্সিকান খাবার।'
তানিয়া বলেন, ৬০০ পাউন্ড ওজন কমানোর পর আমি আমার নিজের ওজন পরিমাপ করা বন্ধ করে দিই। এবং তখন আমার অনিয়মিত মাসিক ছিলো ও অনেক বেশি পরিমাণে রক্তপাত হতো। এই অবস্থা এক বছর স্থায়ী ছিলো।'
ব্যায়াম করার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে তিনি খাবার গ্রহণও কমিয়ে দিয়েছিলেন। চাইনিজ খাবারের পরিবর্তে ঘরে তৈরি কম কার্বযুক্ত খাবার গ্রহণ শুরু করেন। সপ্তাহে ছয় দিন দুইঘন্টা করে ব্যায়াম করতে থাকেন।
তানিয়া ডেইলি মেইলকে জানিয়েছেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসার পর ওজন কমিয়ে বাড়ি গেলে আমার পরিবারের কেউ আমাকে চিনতেই পারেনি। কারণ, তারা আমার সম্পূর্ণ রূপান্তর দেখেনি। তিনি বলেন, আমি যখন দরোজায় গিয়ে দাঁড়ালাম, তারা প্রশ্ন করেন কে তুমি?।
তিনি বলেন, একবার আমি আমার ভাগ্নির সাথে মার্কেটে দেখা করি। আমি তাকে দেখে তার দিকে হাঁটতে থাকি। কিন্তু সে আমাকে চিনতে না পেরে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিলো। তখন তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম এবং সে বললো, 'তুমি কে?'।
তানিয়া বলেন, ২০২২ সালে ওজন কমানোর যাত্রার মাঝামাঝি সময়ে, আমার নতুন সঙ্গী নৌবাহিনীর মেকানিক গ্যাব্রিয়েলের সাথে যখন দেখা করি, তখন আমি বলেছিলাম, 'আমি নিজের উপর কাজ করছি। আমি ওজন কমাতে যাচ্ছি। যদি তুমি আমার লক্ষ্য পূরণ না করো, তাহলে আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না'।
তানিয়া এখন তার পুরনো সেভেন এক্সেল পোশাকগুলো দেখে অতীতের স্মৃতি স্মরণ করেন যে তিনি কতদূর এগিয়েছেন।
তানিয়া এখন ফিটনেসের প্রশিক্ষক, ইনফ্লুয়েন্সার এবং বডিবিল্ডার হতে চান।
ওজন কমানোর আগে এবং পরে তানিয়ার ডায়েট
সকালের নাস্তা: পিৎজা, চাইনিজ, ডিম এবং পনির
দুপুরের খাবার: রেস্টুরেন্ট বা দোকানের খাবার
রাতের খাবার: ছয়জনের পরিমাণে চাইনিজ
বর্তমানে ডায়েট
সকালের নাস্তা: কেটো রুটি, টার্কি, বেকন, ডিম, টমেটো
দুপুরের খাবার: ব্রেডেড চিকেন (কম কার্ব), মরিচ, পেঁয়াজ টর্টিলাস
রাতের খাবার: মটর পাস্তা