বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

| ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

‘গোঁফওয়ালা’ রাজকুমারীর প্রেমে প্রত্যাখ্যাত ১৩ জনের আত্মহত্যা! 

সমাজকাল ডেস্ক 

প্রকাশ: ১৯:২২, ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২১:০০, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

‘গোঁফওয়ালা’ রাজকুমারীর প্রেমে প্রত্যাখ্যাত ১৩ জনের আত্মহত্যা! 

আঠারো শতকে পারস্যে পুরুষালী চেহারার এক রাজকুমারী ছিলেন। রাজকুমারীর আবার গোঁফও ছিল। এই গোঁফওয়ালা রাজকুমারীই ছিলেন সেই যুগের দৃষ্টিতে সেরা সুন্দরী। এমনকি তাকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল অনেক পুরুষ। তাদের মধ্যে ১৩ জন আত্মহত্যাও করেন! 

এই নারীর নাম প্রিন্সেস কাজার। তার প্রকৃত নাম ফাতেমা খানম এবং উপাধি ছিল ইসমত উদ-দৌলা। সংক্ষেপে প্রিন্সেস ইসমত। তিনি ছিলেন তৎকালীন পারস্যের কাজার রাজবংশের রাজা নাসিরউদ্দিন শাহ কাজার এবং তার স্ত্রী তাজ উদ-দৌলার দ্বিতীয় কন্যা। কাজার রাজবংশের রাজকন্যা হওয়ায় তাকে প্রিন্সেস কাজার বলেই সবাই চিনতেন।

নাসিরউদ্দিন শাহ কাজারের ছেলেমেয়ে ছিল ২১ জন। তাদেরই একজন ইসমত উদ-দৌলা। তার জন্ম ১৮৫৫ সালে।নাসিরউদ্দিন শাহের শাসনামলে পারস্যের আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগে তার রাজ দরবারেও। শাহেনশাহ নাসিরউদ্দিন শাহ কাজার ছিলেন কাজার রাজবংশের সবচেয়ে যোগ্য এবং সফল শাসক। তার সময়ে পারস্যে ইউরোপীয়দের প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেক বৃদ্ধি পায়।

কাজার রাজবংশ ছিল পারস্যের দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশগুলোর মধ্যে একটি। তুর্কি বংশোদ্ভূত কাজার রাজবংশের শাসন স্থায়ী ছিল ১৭৮৫ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত। এ রাজবংশের তৃতীয় রাজা ছিলেন নাসিরউদ্দিন শাহ কাজার। তিনি তার পিতা মোহাম্মদ শাহ কাজারের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা পান। তার শাসনকাল ছিল পারস্যের ইতিহাসের তৃতীয় দীর্ঘস্থায়ী শাসনকাল। ১৮৪৮ সালে তিনি সিংহাসনে বসেন এবং ১৮৯৬ সালে তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন। নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রায় অর্ধ-শতাব্দী তিনি পারস্যের শাসনকর্তা ছিলেন।

নাসিরউদ্দিন শাহ কাজারের মেয়ে প্রিন্সেস ইসমতকে সেসময় সবচেয়ে সুন্দরী নারী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে তার সৎ বোন প্রিন্সেস তাজ আস-সুলতানা ছিলেন সেই সময়ের তুলনায় বেশি আধুনিক। প্রিন্সেস ইসমত ছিলেন স্রোতের একেবারে বিপরীত। প্রচলিত রীতি ভেঙে তিনি পিয়ানো বাজানো শিখেছিলেন। তার খুব ছবি তোলার শখ ছিল। তবে তার বেশিরভাগ ছবিই তুলেছিলেন তার স্বামী দাস্ত মোহাম্মদ খান।

প্রিন্সেস ইসমতের জীবন ছিল ক্ষনস্থায়ী। মাত্র ৫০ বছর বয়সে ১৯০৫ সালে তিনি মারা যান।

কাজার সাম্রাজ্যের নারীদের পোশাক এবং গোঁফ রাখার অদ্ভুত সংস্কৃতির ওপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আফসানেহ নাজমাবাদির একটি বই লিখেছেন। তাতে প্রিন্সেস ইসমতকে অত্যন্ত গুণী এবং প্রভাবশালী নারী উল্লেখ করা হলেও তিনি সৌন্দর্যের প্রতীক ছিলেন এবং পারস্যের পুরুষরা তার জন্য পাগল ছিলেন, এমন কোনো দাবি করা হয়নি। তবে সেসময় পারস্যে আসলেই নারীদের গোঁফ রাখার প্রচলন ছিল এবং একে নারীর সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এমনকি তারা ভ্রুও আঁকতেন মোটা করে। এজন্য আলাদাভাবে কালি তৈরি করে নিতেন তারা।

ইরানি ইতিহাসবিদ ড. আফসানেহ নাজমাবাদির মতে, ঊনবিংশ শতাব্দীর পারস্যের কাজার গোত্রের শৌখিন নারীরা সৌন্দর্যচর্চার অংশ হিসেবে হালকা গোঁফ রাখতে পছন্দ করতেন। আবার অনেকেই প্রিন্সেস কাজার বলতে ইসমত না, বরং তার সৎ বোন তাজ আস-সুলতানাকে বোঝানো হয়েছে বলে দাবি করেন। আধুনিক মাপকাঠিতে তাজ আস-সুলতানাকে ইসমতের তুলনায় অনেক বেশি সুন্দরী বলে মনে হতে পারে। এছাড়া তাজ আস-সুলতানা ছিলেন একইসঙ্গে নারীবাদী ও জাতীয়তাবাদী। তিনি নিজে হিজাব পরিত্যাগ করেছিলেন, নারীদের আধুনিক শিক্ষা ও চাকরি এবং পারস্যের সংবিধান সংশোধনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। বিশেষ করে তাজ আস-সুলতানা ছিলেন সেসময়ের খুবই প্রভাবশালী নারী।

ইতিহাসে এই দুই নারীর জীবনী সম্পর্কে জানা যায়, তাদের সৌন্দর্যের চেয়ে অন্যান্য কর্মকাণ্ডই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইতিহাসবিদ ড. স্টাসি জেম শেউইলারের মতে, তাদের সময়ে ইসমত এবং তাজ তাদের সৌন্দর্যের জন্য খুব বেশি পরিচিত ছিলেন না। বরং তাদের মেধা ও যোগ্যতাই ছিলো তাদের মূল পরিচয়।

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ:

পুয়ের্তো রিকোর জালে মেসির আর্জেন্টিনার ৬ গোল
স্বাক্ষরবিহীন ব্যালট পেপার বিতর্কে তোলপাড়
চাকসু নির্বাচন অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়ার অভিযোগ
রোম সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
মিরপুরে অগ্নিকাণ্ডে ৯ জনের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
মিরপুরের আগুন গার্মেন্টসের দ্বিতীয় তলা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার
হাসিনাকে ফেরাতে রেড নোটিশ জারির পদক্ষেপ
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনিসিপিকে প্রতীক নিতে হবে
শিশুদের জন্য বিপজ্জনক ভারতের ৩ কফ সিরাপ: ডব্লিউএইচও
বুধবার থেকে শুরু অনলাইন জামিননামা প্রক্রিয়া
শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থান
আগামী রবিবার থেকে মাসব্যাপী শিশু-কিশোরদের বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকাদান শুরু