শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

বিয়ের ফাঁদে ৮৬ বছরের বুড়ির টাকা লুট 

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০০:১৩, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিয়ের ফাঁদে ৮৬ বছরের বুড়ির টাকা লুট 

অনলাইনে এক বৃদ্ধ ব্রিটিশ নারী মিশরীয় এক তরূণের প্রেমে পড়েছিলেন। প্রেমের টানে ওই নারী মিশর ছুটে যান। তারপর  বিয়ের ফাঁদে ফেলে ওই তরুণ তার সব টাকা-পয়সা লুটে নেয়। 

ডেইলি মেইল জানায়, ওই নারীর নাম আইরিস জোন্স। তার বয়স এখন ৮৬ বছর। তিনি দুই ছেলের মা। বড় ছেলে স্টিফেনের ৫৯ ও ছোট ছেলে ড্যারেনের বয়স ৫৮ বছর। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। কর্মজীবনে তিনি বৃটেনের আইন সচিব ছিলেন। ২০১৯ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় এই জুটির। তারপর ২০২০ সালে তারা বিয়ে করেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে আইরিস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে জানান, তিনি তার স্বামী ইব্রাহিমের সাথে বিচ্ছেদ করেছেন এবং তাকে স্বার্থপর অর্থ-লোভী বলে অভিযোগ করেছেন। 

আইরিস জানান, আমি বুঝতে পারছি, ইব্রাহিম কেবল আমার টাকার জন্যই আমাকে বিয়ে করেছিলো। পেছন ফিরে ভাবছি, আমি কীভাবে এতো বোকা হতে পারলাম?

তিনি বলেন, বিচ্ছেদ সত্ত্বেও আমি ও ইব্রাহিম এখনও বিবাহিত। কারণ বিচ্ছেদের জন্য যেল অর্থ প্রয়োজন তা আমি ব্যয় করতে চাই না। 

আইরিস ২০২০ সালের গোড়ার দিকে আইটিভির দিস মর্নিং অনুষ্ঠানে দর্শকদের অবাক করে দিয়ে ইব্রাহিমের সাথে দেখা করতে মিশরে যাওয়ার পূর্বাপর ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন।

গত বছর ফেসবুকে আইরিস একটি সতর্কীকরণ পোস্ট দেন। তাতে তিনি স্ক্যামার ও প্রতারকদের সাথে চ্যাট করা থেকে নারীদের বিরত থাকতে বলেন।

তিনি আরও লিখেছিলেন, অপরাধীরা শুধু অর্থের উপর তাদের নোংরা থাবা দিতে আগ্রহী। তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা সপ্তাহ, এমনকি মাসের পর মাস ধরে মিষ্টি কথা বলবে।

আইরিস বলেন, ২৫ জুন, ২০১৯ তারিখে আমি ইব্রাহিমের কাছ থেকে প্রথম একটি বার্তা পাই। তারপর আমরা মেসেঞ্জারে বন্ধু হই।

সে একজন ভালো ছেলে বলে মনে হচ্ছিলো। সে বলেছিলো, তার পরিবার তাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। তার চারটি সন্তান আছে। কিন্তু সে জীবনে সুখী নয়। তাই সে বিয়ে বিচ্ছেদ করে নতুন জীবন শুরু করতে চায়। আমি তাকে বলেছিলাম, তুমি শিগগিরই তোমার মতো সুন্দর কাউকে খুঁজে পাবে। 

তাকে নিজের সম্পর্কে বললাম, আমি ৭৯ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধা। আমার দুটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে আছে। তারা উভয়ই বিবাহিত। তারা আমার থেকে খুব বেশি দূরে থাকে না।

আমাদের একে অপরের কাছে বার্তা পাঠানো অব্যাহত ছিলো। আমি বুঝতে পারছিলাম, সে আরও বেশি প্রেমময় হয়ে উঠছে। ২০১৯ সালের ১০ জুলাই সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়!

সে কখনোই আমার চেহারা দেখেনি। আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিলো তুমি পাগল! একই বছর নভেম্বর মাসে আমি কায়রোতে গিয়ে তার সাথে দেখা করি।

আমি ১২ লাখ টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম এবং তার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করেছিলাম। কারণ সে তার ক্রেডিট কার্ডে ঋণগ্রস্ত ছিলো।

আমি তখন এক মাস ছিলাম। আমরা বিয়ে করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তখন আমাদের কাছে সঠিক কাগজপত্র ছিলো না।

আইরিস বলেন, কায়রোতে ব্রিটিশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা, জন নীল, তাকে কোনও টাকা না দিতে আমাকে সতর্ক করেছিলেন। 

কিন্তু আইরিস তার পরামর্শ শোনেননি। পরের বার যখন তিনি ইব্রাহিমের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি তাকে ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন।

এই সময়ের মধ্যে কোভিড আঘাত হেনেছিলো। তাই মহামারীর কারণে বিয়ে করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিলো। কিন্তু ২০২০ সালে তার তৃতীয় ভ্রমণে তারা বিয়ে করেন।

আইরিস বলেন, যখন কায়রো যাই তখন আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৭০ লাখ টাকা ছিলো। আমি আমার ব্যাংক কার্ড ইব্রাহিমের কাছে হস্তান্তর করেছিলাম। তাকে বলেছিলাম, জীবনযাত্রা, খাওয়া-দাওয়া অন্যান্য খরচ বাবদ আমরা প্রতিদিন ২,৪০০ টাকা খরচ করবো। 

আমি তখন তিন মাস মিশরে ছিলাম। এই সময়ে আমার খরচ হওয়ার কথা ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং অ্যাকাউন্টে থাকবে ৬৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।  কিন্তু ইংল্যান্ডে ফিরে ব্যাংক ব্যালেন্স চেক করে দেখি আর মাত্র ১৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা আছে। এতো টাকা খরচ দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। টেলিফোনে তাকে এতো খরচ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সে আমার ওপর খুব্ধ হয়। 

ইব্রাহিম কখনও চাকরি করেনি। তার কোন সঞ্চয় ছিলো না। আমি সবাইকে বলতাম, আমরা খরচ ভাগ করে নিই। কিন্তু আমিই আমার টাকা সবকিছুর জন্য ব্যয় করতাম। 

আইরিশ বলেন, যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার পরও ইব্রাহিম টাকা চাইতো। পরে তাকে আরও ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাঠাই। 

দ্য মিরর জানায়, ২০২১ সালের নভেম্বরে ইব্রাহিম ব্রিটেনে আসার জন্য স্বামী-স্ত্রীর ভিসা পান। পর্যালোচনার জন্য তাকে দুই বছরের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। 

স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে সন্তুষ্ট করার জন্য আইরিস ইব্রাহিমের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেন, যাতে মনে না হয় যে তিনি অন্য দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছেন। 

কিন্তু লন্ডনে এসে স্থানীয় একটি সুপারমার্কেটে চাকরি পাওয়ার পরও সে আইরিশের কাছে টাকা চাইতে থাকে। তখন তিনি তাকে আরও ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দেন।

আইরিস জানান, এর কিছুদিন পর ইব্রাহিম আমার কাছে আরও 
৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা চান। আমি বলেছিলাম, আমার কাছে আর টাকা নেই। যদি আমি আগামীকাল মারা যাই, তবে আমাকে কবর দেওয়ার জন্যও কোনো টাকা থাকবে না। এই কথা শুনে ইব্রাহিম রেগে যায়। 

আইরিস আরও বলেন, তারপর তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। ইব্রাহিম যখন জানতে পারে, সে আমার সমুদ্রতীরবর্তী বাংলোর উত্তরাধিকারী হবে না, তখন সে আমার সঙ্গে মারমুখি আচরণ করে। 

তারপর ২০২৩ সালের ১৩ জুন আমার বাংলো তার নামে লিখে দিতে বলে। আমি তাতে রাজি না হলে সে আমার সাথে তীব্র ঝগড়া শুরু করে। তখন আমি তাকে আমার বাড়ি থেকে চলে যেতে বলি। এরপর থেকে তার সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ নেই।

প্রেমে পড়ে কোনো কিছু চিন্তা না করেই নারীদের প্রায়ই নানা দেশে চলে যেতে দেখা যায়। তারা ভাবে না, সেই পুরুষটি আসলে কেমন। অজানা পুরুষকে বিয়ের পর বেশিরভাগ নারীই প্রতারিত হন। তাই বিয়ের আগে ভালোবাসার মানুষটি সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নেয়া উচিত। নইলে তারা আইরিশের মতো প্রতারণার শিকার হতেই থাকবে।

আরও পড়ুন