শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

ডাকসু ভোট

অভিযোগ পর্যবেক্ষণ ও তদন্তে ঢাবি প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০:৩৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অভিযোগ পর্যবেক্ষণ ও তদন্তে ঢাবি প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের ছাত্রদলের দাবিকে অগ্রাহ্য করায় ঢাবি প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ছাত্রদল।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করার তথ্য জানিয়ে যে যে বক্তব্য দিয়েছে, সেই বক্তব্য অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই প্রশ্ন তোলে সংগঠনটি ।

বিবৃতিতে বলা হয়, “ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীদের তোলা ১১টি অভিযোগের বিষয়ে ভালোভাবে বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিবৃতি প্রকাশ করেছে। মোটাদাগে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণের আবেদনগুলোকে ‘অনির্দিষ্ট’ বলা হয়েছে। কিন্তু প্রার্থীরা তাদের আবেদনপত্রে সুনির্দিষ্টভাবে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল কেন্দ্রের কিছু নির্দিষ্ট বুথের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার জন্য আবেদন করেছেন। আর ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত সন্দেহের বিষয়টি নির্বাচনের দিনের সম্পূর্ণ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ছাড়া নিরসন করা সম্ভব নয়।"

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “তাই ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি ভিডিও ‘পাবলিক ডকুমেন্ট’ নয় সেটি জেনেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে প্রার্থীরা তা ব্যক্তিগতভাবে পর্যালোচনার আবেদন করেছেন। তদুপরি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসারে ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র অনুসারে তিন দিনের মধ্যেই আবেদন ও বারবার মনোযোগ আকর্ষণের আন্তরিক প্রচেষ্টা করার পরে সংবাদ সম্মেলন করে সুনির্দিষ্ট ১১টি অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেগুলোকে ‘সারবত্তাহীন’ ও ‘অনির্দিষ্ট’ কেন বলা হল, তা অত্যন্ত অস্পষ্ট।”

ছাত্রদল বলেছে, “যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসারে করা আবেদন ও অভিযোগের জবাব না দিয়ে শুধু লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনকেই গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের আন্তরিকতার অভাব প্রকাশ করেছে। তবে কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেই তথাকথিত ‘যথাযথ প্রক্রিয়া’ কেবল কালক্ষেপণ ও এড়িয়ে যাবার কৌশল? এটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর প্রশ্ন।”

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ১১টি অনিয়মের অভিযোগ করে ছাত্রদল। সেখানে তারা ভোটের সিসিটিভি ভিডিও প্রকাশের দাবি তুললে তাতে অপারগতা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

গত বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ডাকসু নির্বাচন কমিশন বলে, ‘অস্পষ্ট ও সারবত্তাহীন’ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ তালিকা দেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সবিনয়ে অপারগতা প্রকাশ করছে।

ছাত্রদল বলছে, যেকোনো নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে ভোটার তালিকা থাকা এবং ভোটগ্রহণ চলাকালেই ভোটার তালিকা অনুসারে পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতি যাচাইকরণ সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে কোনো পোলিং এজেন্টকেই সেরকম কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। সে কারণে বাস্তবিক ভোটার উপস্থিতির তুলনায় ভোটার উপস্থিতির প্রকাশিত হার নিয়ে চরম বিতর্কের হলেও সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যতীত কারো কাছেই ছিল না এবং এখনো নেই।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “তবুও সে বিষয়ে ভোটগ্রহণের সময় কোনোরূপ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে যথাসময়ে যথানিয়মে এসব অসঙ্গতির বিষয়ে সন্দেহ দূর করতে সুনির্দিষ্ট আবেদনপত্র দাখিল করা হয়েছে। তা ছাড়াও নির্বাচনের আগে ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসহ ভোটার তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করার বিষয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়। সে জটিলতাকে মাথায় রেখেই সকল গোপনীয়তা বজায় রেখে প্রয়োজনে ভোটারদের ছবি ও স্বাক্ষর মুছে শুধু উপস্থিতি চিহ্নিত করে আবেদনকারীদেরকে ভোটার উপস্থিতির তালিকা পর্যালোচনা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে আবেদন করা হয়। তার পরেও এসব আবেদনকে ‘অনির্দিষ্ট’ বা ‘সারবত্তাহীন’ বলে তুলে ধরেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাব বলেই প্রতীয়মান হয়।”

ডাকসুর ব্যালট পেপার নীলক্ষেতে ছাপানো হয়েছে দাবি করে ছাত্রদল বলেছে, অভিযোগটিকে পুরোপুরিভাবে প্রশাসন অস্বীকার করলেও সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে নীলক্ষেতেই ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানো হয়। অর্থাৎ, এটি স্পষ্ট যে ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে মিথ্যাচার করেছে।”

গত ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদের ভোট হয়। তাতে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ভোটে ছাত্রশিবিরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রার্থীরা। তবে কোনো পদেই তারা জয়ের মুখ দেখেননি। সম্পাদকীয় যে তিনটি পদ শিবিরের হাতছাড়া হয়, সেগুলোতে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

ভোটের ১৩ দিনের মাথায় কারচুপির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ছাত্রদল থেকে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা। তারা ডাকসু নির্বাচনের ১১টি অনিয়ম-অভিযোগ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উপস্থিতির আগেই ভোটার তালিকায় ভোটারের স্বাক্ষর থাকা এবং নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহসহ নানা জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসব বিষয়ে ভোটার তালিকা ও সিসিটিভি ভিডিও চেয়ে আবেদন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন ছাত্রদলের প্রার্থীরা।

নির্বাচনে নানা অনিয়ম কারচুপির অভিযোগে জানাতে সবশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে সাক্ষাত করে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ ও ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল। সেখানেও তারা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের দাবি নিয়ে গড়িমসি করছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়  সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তবে বিজ্ঞপ্তিতে সবার সব অভিযোগের জবাব দেয়নি প্রশাসন। কেবল ছাত্রদলের অভিযোগের জবাব দেওয়ার আভাস রয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

আরও পড়ুন