বিশ্বের দীর্ঘায়ু নারী মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা
গোপন রহস্যে ১১৭ বছর বয়সের গল্প
বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯:৪৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মানুষের স্বাভাবিক কৌতূহল—কে কতোদিন বাঁচলো, আর তার রহস্য কোথায় লুকানো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানের চোখ এবার পড়েছে বিশ্বের দীর্ঘায়ু নারী মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরা–র দিকে। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এই স্প্যানিশ নারী ২০২৪ সালের আগস্টে ১১৭ বছর ১৬৮ দিন বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত মানুষের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা জার্নাল Cell Reports Medicine-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় তার জিনোম ঘনিষ্ঠভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণার নেতৃত্ব দেন বার্সেলোনার জোসেপ কারেরাস লিউকেমিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মানেল এসতেল্লের।
গবেষকরা জানিয়েছেন, মারিয়া দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন একদিকে জিনগত সৌভাগ্যের কারণে, অন্যদিকে তার স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য।
জিনগত প্রভাব: তার জিনে এমন কিছু ভ্যারিয়েশন পাওয়া গেছে যা ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা দীর্ঘ সময় অক্ষুণ্ণ রাখে এবং হৃদরোগসহ বয়সজনিত জটিলতা প্রতিরোধ করে।
জীবনধারা: তিনি কখনো ধূমপান বা মদ্যপান করেননি, প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস ছিল, গ্রামীণ পরিবেশে জীবনযাপন করেছেন এবং ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেছেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তার দই খাওয়ার অভ্যাস—প্রতিদিন তিন বাটি দই খেতেন তিনি। গবেষকরা মনে করেন, এই অভ্যাস তার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে তরুণদের মতো সক্রিয় রেখেছে এবং প্রদাহ কমিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন—এটি একজন ব্যক্তির উপর ভিত্তি করে করা গবেষণা, তাই এর ফলাফলকে সর্বজনীন করে দেখা যাবে না। তবে এতে একটি বড় শিক্ষা আছে:
অসুস্থ বার্ধক্য অবশ্যম্ভাবী নয়।সুস্থ জীবনযাপনের পাশাপাশি জিনগত উপাদানও বড় ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতে এসব জিন ও প্রোটিন চিহ্নিত করে নতুন ওষুধ উদ্ভাবন সম্ভব হতে পারে।
লন্ডনের কিংস কলেজের বার্ধক্য-বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক ক্লেয়ার স্টিভস বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য সবার ১১৭ বছর বাঁচা নয়, বরং অসুস্থ সময়টুকুকে যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা। মারিয়া ব্রানিয়াস সেটিই করে দেখিয়েছেন।”