ভোটের দায়িত্ব পাচ্ছেন না বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:১৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
ভোটের দায়িত্ব পাচ্ছেন না বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নির্বাচনে নিরপেক্ষতার প্রশ্নে রাজনৈতিক বিতর্ক এবং সাম্প্রতিক আলোচনার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের ভোটের দায়িত্বে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত দশম কমিশন সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব এবং বিভিন্ন স্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে কমিশন ঐকমত্যে সিদ্ধান্তে আসে যে, যেকোনো ধরনের বিতর্ক, অভিযোগ বা পক্ষপাতিত্বের ধারণা এড়াতে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভোটগ্রহণের দায়িত্বে রাখা হবে না।
গত ২৩ নভেম্বর বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়ে ইসলামী ব্যাংকসহ দলীয় প্রভাববলয়–চিহ্নিত প্রতিষ্ঠান থেকে কাউকে ভোট গ্রহণের কাজে নিয়োগ না দেওয়ার অনুরোধ জানায়। দলটি ৩৬ দফার প্রস্তাব জমা দেয়, যেখানে বলা হয়েছিল—নির্বাচনের নিরপেক্ষতা রক্ষায় প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতিষ্ঠান বা বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহার করা যাবে না।
প্রস্তাবে উল্লেখ ছিল, ইসলামী ব্যাংকের প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাম্প্রতিক বহিষ্কার এবং সেই শূন্যপদে দলীয় নিয়োগ—যা ঘিরে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে—সেই প্রেক্ষাপটে এই দাবি তোলা হয়েছে।
তিন দিন পর বিবৃতি দিয়ে বিএনপির দাবি অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন—ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক বা ইবনে সিনা—এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন অরাজনৈতিক ও সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালনে সততা ও নিষ্ঠা দেখিয়ে আসছেন। বিএনপির অভিযোগ প্রমাণহীন এবং রাজনৈতিক।
জামায়াত দাবি করে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সেবা কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল একটি জুম মিটিংয়ের ভিডিও নির্বাচনী বিতর্ককে আরও তীব্র করে। ভিডিওতে ইসলামী ব্যাংকের একজন পরিচালক এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদকে নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দিতে দেখা যায়।
ছাত্রশিবিরের সাবেক এই নেতার এমন নির্দেশনামূলক বক্তব্য ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটার প্রশ্ন তোলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক কি করে রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে কৌশলগত নির্দেশনা দিতে পারেন?
এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই কমিশনের ওপর চাপ বাড়তে থাকে যাতে বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত কোনো ব্যক্তিকে ভোটের দায়িত্বে রাখা না হয়।
অবশেষে নির্বাচন কমিশন সব বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিলো।
