কে জিতেছেন, আর কে হেরেছেন!
প্রকাশ: ২৩:৫২, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের আরএস ধনদেব বর্মণের সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়ের বাকবিতণ্ডা দেখলাম। এই বাকযুদ্ধ দেখাটা আমার জন্য অস্বস্তিকর ছিল। দুজন সিনিয়র মানুষ এতগুলো মানুষের সামনে তর্কাতর্কি করছেন, কেউ কাউকে সম্মান করছেন না—এরকম পরিস্থিতিতে কে জিতেছেন, আর কে হেরেছেন এই বিচারটা আসে না।
তবে মিনিট খানেকের একটা ভিডিও, একটা সিঙ্গেল সিকুয়েন্সের কনভারসেশন দিয়ে এই তর্কের নেপথ্যের গল্পটা বোঝা যাবে না। ডা. ধনদেব বর্মণ আসলে আউটবার্স্ট করেছেন। যতদূর জানি উনি অত্যন্ত অমায়িক ও নিচুগলায় কথা বলা মানুষ। কিন্তু হঠাৎ করেই তার বারুদের স্তূপে আগুন ধরে গেছে।
ডা. ধনদেব বর্মণ ও ডিজি স্যার, একই ক্যাম্পাসের চার বছরের সিনিয়র জুনিয়র। ডিজি স্যার তো ডিজি। ধনদেব চাকরি শেষে সহকারী অধ্যাপক।
ডা. বর্মণের সরকারি চাকরিজীবনটি ছিল একটা উদ্ভট উটের পিঠে যাত্রা। পোস্ট গ্রাজুয়েশন করতে গিয়ে পদে পদে ধাক্কা খেয়েছেন। ট্রেনিং পোস্ট পাননি পাঁচ বছর। ডিজি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কোনো নেতার আস্থাভাজন তিনি হতে পারেননি। তাই সময়মতো মেলেনি ট্রেনিং পোস্ট। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পাস করতে তার দেরি হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টের সর্বোচ্চ এমএস ডিগ্রিটি তিনি কমপ্লিট করেছেন ২০১৩ সালে। বিগত ১২ বছরে পেয়েছেন একটি প্রমোশন। মেডিকেল অফিসার থেকে সহকারী অধ্যাপক।
একজন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ধারণা করা যায় উনি কোনো ইউনিট পাননি। উনাকে ক্যাজুয়াল্টির ইনচার্জ টাইপ একটা কমদামি মূলা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটাকেই তিনি কোনরকমে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে সর্বোচ্চ যতটুকু করা যায়।
মানুষটার আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা ছিল তা বুঝা যায়৷ ডিজি স্যার হুট করে এসে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সামনে উনার কাজকর্মের ভুল ধরা শুরু করেছেন। উনাকে হেয় করে কথা বলতে শুরু করলেন। তুমি সম্বোধন করে কথা বলছিলেন। এরকম সিনিয়র একজন সহকারী অধ্যাপককে এভাবে ‘তুমি’ ‘তুমি’ করে বলাটা কি ডিজি স্যারের উচিত হয়েছে? এটা অফিসার সুলভ হয়েছে? উনি পারেন এটা বলতে?
ডিজি মহোদয় রেগে গিয়ে বললেন, ‘জানো’ তুমি কার সামনে কথা বলছ? আমি কে?’ ‘এই ভিডিও কর।’ এগুলো চরম অপেশাদার আচরণ।
হ্যাঁ, বর্মণ স্যারও পারতেন সিনিয়রের, ঊর্ধ্বতনের বকাঝকা হজম করতে। কিন্তু বুকে সীমাহীন বঞ্চনা নিয়ে যে মানুষটা গত ২৭ বছর ধরে পশ্চাদ্দেশ দিয়ে সরকারি হাসপাতালের পাহাড়টি ঠেলেছেন তার আর ধৈর্যে কুলায়নি হয়তো।
বর্মণ স্যার আপনার বেদনাটা আমি বুঝি। কিন্তু এই একটা স্ট্যাটাস লেখা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই। আপনার আগামী দিনগুলো ভালো কাটুক। রিটায়ারমেন্টে যাবার পর আপনি একটা শান্তির জীবন খুঁজে নেবেন আশা করি। একটা সুখী, সাদামাটা ডাক্তারের জীবন। তাও যদি না পান তাহলে আপনাকে পরের জন্মের জন্যই অপেক্ষা করতে হবে। প্রার্থনা রইল পরের জন্মে আপনি পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে জন্ম নেবেন। আর যদি কর্মের দোষে এদেশেই জন্ম হয়ে যায় তাহলে পুলিশ বা অ্যাডমিন ক্যাডার হয়ে আসবেন।
লেখক: চিকিৎসক
* মতামত লেখকের নিজস্ব
