ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারে কুনো ব্যাঙ!
রাজীব শাঁখারী
প্রকাশ: ১৫:০৭, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২১:০৮, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
কুনো ব্যাঙ। ছবি: সংগৃহীত
কুনো ব্যাঙ আমরা কম-বেশি সকলেই চিনি। বাড়ির আঙিনায়, ঘরের কোনায়, যেখানে সেখানে অবহেলায় পড়ে থাকে এই কুনো ব্যাঙ। অবাক করা বিষয় হলো এই কুনো ব্যাঙই নাকি দিতে পারে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা—সেটাও আবার এক সপ্তাহ আগে!

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনই অবাক করা তথ্য পাওয়া গেছে। বিজ্ঞান যেখানে এখনও ভূমিকম্পের নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস দিতে পারেনি, সেখানে এই ক্ষুদ্র প্রাণীটি যেন প্রকৃতির এক বিশেষ বার্তাবাহক।
ইতালির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমিকম্পের পাঁচ দিন আগে দল বেঁধে নিজেদের আবাস্থল ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যায় কুনো ব্যাঙের দল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি প্রাণিজগতের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সংকেত।

ইতালির গবেষণায় মিলল প্রমাণ
২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিদ ড. রাসেল গ্রান্ট, ভূমিকম্পের আগে প্রাণীর আচরণ নিয়ে এক গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় সাপ বা মাছের অস্বাভাবিক আচরণের কথা আগেই জানা ছিল, তবে ব্যাঙ কী ধরনের সংকেত দেয়—সেটি জানতেই গবেষণা চালিয়েছেলেন তিনি।
গবেষণার কিছুদিন পরেই তিনি খুঁজে পান অবাক করা দৃশ্য। গবেষণা শুরুর ২৯ দিন পরে, ২০০৯ সালের ৬ এপ্রিল ইতালির আবরুৎসো অঞ্চলে ঘটে ৬.৩ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প। ঠিক তার ৬–৭ দিন আগে থেকেই তিনি দেখতে পান গবেষণাস্থল সান রুফফিনো লেকের কুনো ব্যাঙগুলো অন্যরকম অদ্ভুত আচরণ শুরু করে।

প্রথমে ব্যাঙগুলো তাদের বাসস্থান বদলাতে থাকে। একপর্যায়ে ধীরে ধীরে সব ব্যাঙই ঐ স্থান ত্যাগ করে, এমনকি ডিম পাড়ার সময় ঘনিয়ে আসা স্ত্রী ব্যাঙগুলোও একই আচরণ করতে থাকে। ব্যাঙের এই আচরণের তিনদিন পরেই আঘাত হানে ভূমিকম্প। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে লাকিলা শহরসহ আশপাশের এলাকায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান।
ঝড়–বৃষ্টিতে নয়, শুধুই ভূমিকম্পে এমন আচরণ
গবেষক ড. গ্রান্ট তার গবেষণায় আরও জানিয়েছেন, ঝড়-বৃষ্টি বা সাধারণ আবহাওয়া পরিবর্তনে ব্যাঙের এমন আচরণ দেখা যায় না। গবেষকদের মতে, কুনো ব্যাঙের দেহে হয়তো রয়েছে প্রকৃতির দেয়া বিশেষ সেন্সর, যা ভূগর্ভের পরিবর্তনের সংকেত আগে থেকেই বুঝতে পারে।

ভূমিকম্পের পরে ছয়–সাত দিন পার হলে ব্যাঙগুলো আবার আগের জায়গায় ফিরে আসতে দেখা যায়। এ সময়ও কয়েক দফা ছোটখাটো কম্পন অনুভূত হয় এলাকায়।
কেন ব্যাঙ বুঝতে পারে আগাম সংকেত?
গবেষক ড. গ্রান্টের দলের ধারণা, ভূমিকম্পের আগে ভূগর্ভস্থ পাথরে চাপের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে বিশেষ ধরনের গ্যাস বা রাসায়নিক উপাদান নির্গত হয়। এই পরিবর্তন এবং নির্গত বিশেষ ধরনের গ্যাস বা রাসায়নিক উপাদান ব্যাঙের স্নায়ুতন্ত্রে দ্রুত ধরা পড়ে, যার কারণে তারা বিপদের পূর্বাভাস আগে থেকেই আঁচ করতে পারে। গবেষণা দল বলছে, এই রহস্য পুরোপুরি উদ্ঘাটন করা গেলে ভবিষ্যতে ভূমিকম্প পূর্বাভাসে বড় অগ্রগতি পাওয়া যেতে পারে।

প্রকৃতির যত্ন নিলে যেমন প্রকৃতিও আমাদের যত্ন নেয়। তেমনি প্রকৃতির ক্ষতি করলে প্রকৃতিও তার প্রতিশোধ নেয়। সৃষ্টিকর্তার প্রতিটি সৃষ্টিই হয়েছে মানব কল্যাণের জন্য। আর কুনো ব্যাঙও প্রকৃতির সৃষ্টি। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে অনেক প্রাণীর জীবন আজ সংকটাপন্ন। তেমনই একটি প্রাণী কুনো ব্যাঙ। তাই আসুন, আমরা শুধু কুনো ব্যাঙ নয়, বরং প্রকৃতির সকল প্রাণীদের সংরক্ষনে সচেতন হই। জলবায়ু ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখি এবং প্রাকৃতিক সৌর্দয্যে ভরপুর বিশ্ব গড়ে তুলি।
