খাগড়াছড়ি গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর এন্তার অনিয়ম!
কানন আচার্য, খাগড়াছড়ি
প্রকাশ: ২২:২৮, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
খাগড়াছড়ি গণপূর্ত ভবন। ছবি: সংগৃহীত
খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে দরপত্রে কারচুপি, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ গ্রহণ এবং অশোভন আচরণসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার, দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা–কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যোগদানের পর থেকেই তিনি নিজের ইচ্ছেমতো টেন্ডার প্রক্রিয়া পরিচালনা করে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিচ্ছেন।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইমতিয়াজ আহমেদ এলটিএম ও ওটিএম মিলিয়ে ৭৮টি টেন্ডার স্বজনপ্রীতি, কারচুপি ও অনিয়মের মাধ্যমে সুবিধাভোগী ঠিকাদারদের পাইয়ে দিয়েছেন। এই টেন্ডারগুলোর আনুমানিক আর্থিক পরিমাণ ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
ঠিকাদারদের দাবি, নির্বাহী প্রকৌশলী ইমতিয়াজ আহমেদ ও ইস্টিমেটর দেলোয়ার হোসেন একটি নির্দিষ্ট রীতি অনুসরণ করে অনিয়ম করেন—এলটিএম টেন্ডারে দক্ষ ঠিকাদারদের ননরেসপন্সিভ দেখানো হয়, ওটিএম টেন্ডারে পূর্বনির্ধারিত কিছু ঠিকাদারের জন্য গোপন রেট কোড বসান হয় যাতে শুধু পছন্দের ঠিকাদারই কাজটি পান। এভাবে অফিসের অভ্যন্তরীণ একটি চক্র দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে।
বিল উত্তোলনের ক্ষেত্রেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট ‘হার’ অনুযায়ী ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছে বিভিন্ন পক্ষ।
সূত্র বলছে, একটি কাজের বিল পেতে—নির্বাহী প্রকৌশলী ইমতিয়াজ আহমেদকে ৫%, ইস্টিমেটর দেলোয়ার হোসেনকে ২%, সংশ্লিষ্ট সিলেকশন অফিসারকে (এসও) ৫%, সাবডিভিশন ইঞ্জিনিয়ারকে (এসডি) ২%, হিসাব বিভাগে কর্মরত সুবাস্তুম চাকমাকে ১% ঘুষ দিতে হয়।
ঠিকাদার ও অফিসে কর্মরতদের অভিযোগ, নির্বাহী প্রকৌশলী ইমতিয়াজ আহমেদের অশোভন ও অপেশাদার আচরণ প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কথাবার্তায় রূঢ়তা অযথা হুমকি এবং কাজ বিলম্বিত করার প্রবণতার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের কারণে ইমতিয়াজ আহমেদকে গত এক বছরে তিনবার খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়। প্রথমে তাকে ঢাকা মেট্রোরেল (এমআরটি) প্রকল্পে বদলি করা হয়। গত বছর ৫ আগস্টের পর অস্থির পরিস্থিতির সুযোগে তিনি আবারও গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকায় ফেরেন। কিন্তু দুর্নীতি ও অনিয়মের বহুবিধ অভিযোগের কারণে তাকে আবারও খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগে পুনর্বদলি করা হয়, দপ্তরজুড়ে এখনো এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
স্থানীয় ঠিকাদারদের দাবি, ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে উঠা অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে জরুরি তদন্ত প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এসব অভিযোগ ও অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইমতিয়াজ আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।
