সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ‘ব্যর্থ’: টিআইবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:২৩, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২০:৩৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ‘ব্যর্থ’: টিআইবি। ছবি: সমাজকাল
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর নতুন সুযোগ তৈরি হলেও দুর্নীতি দমনে কঠোর অবস্থান দেখা যায়নি।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ইশতেহার প্রণয়ণে সুপারিশ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এসময় ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “৫ আগস্টের পর দেশে দুর্নীতি বেড়েছে বা কমেছে—এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। আমরা তুলনামূলক তথ্য বিশ্লেষণ করছি। তবে দুর্নীতি যে চলমান, তার বহু দৃষ্টান্ত আমরা ৫ আগস্ট বিকেল থেকেই দেখেছি।”
তিনি আরও বলেন, “দলবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি—এসবের পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রশাসনিক কর্তৃত্ব অপব্যবহার করে এখনও একটি মহল দুর্নীতিতে লিপ্ত রয়েছে। সরকারের অভ্যন্তরীণ কিছু ক্ষেত্রেও অনিয়মের প্রমাণ রয়েছে।”
তার দাবি, দুর্নীতি দমনে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে বড় সুযোগ ছিল, কিন্তু তারা তা কাজে লাগাতে পারেনি।
টিআইবি ব্যাংক খাতের সংকট মোকাবেলায় স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত, দক্ষ ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
এসময় টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, “শুধু আইনি কাঠামো দিয়ে ব্যবসায় খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। উদ্যোগ আসতে হবে খাতের ভেতর থেকেই।”
এজন্য টিআইবি ‘বিজনেস ইন্টেগ্রিটি প্রোগ্রাম’ চালুর প্রস্তাব করেছে, যেখানে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করবেন।
তিনি উল্লেখ করেন, “গত ১৫ বছরে অস্বচ্ছতার কারণে কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী লাভবান হলেও বৃহত্তর খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রকাঠামো দখল ও কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠাতেও তাদের একটি অংশ ভূমিকা রেখেছে।”
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যবসায় খাতে দুর্নীতিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানযোগ্য অপরাধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে সরকার নীতিগতভাবে রাজি হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি বলেন, “ব্যবসায় খাতে শুদ্ধাচার কেবল রাষ্ট্র বা জনগণের স্বার্থে নয়—ব্যবসায়ীদের নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকার জন্যও অপরিহার্য।”
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি মোট ৫২টি সুপারিশ তুলে ধরে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
১. ব্যাংক–আর্থিক খাতকে গোষ্ঠী ও পরিবারতন্ত্রের প্রভাবমুক্ত করা।
২. বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ও ম্যানেজমেন্ট থেকে রাজনৈতিক–ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অপসারণ।
৩. ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে সংঘটিত প্রতারণা ও অনিয়মের দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা।
৪. ব্যবসায় খাতের জবাবদিহিতে ‘বিজনেস ইন্টেগ্রিটি প্রোগ্রাম’।
