প্রেস সচিবের ফেসবুক পোস্ট
৩ কয়লাখনি থেকে কয়লা না তোলা ভুল ছিল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫:৫৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রেস সচিব মন্তব্য করেছেন, “ফুলবাড়ি, দীঘিপাড়া ও জামালগঞ্জ—এই বড় কয়লা মজুতগুলো আমরা না তোলাটা বড় ভুল ছিল” / কোলাজ ছবি
গঠনমূলক সমালোচনার গুরুত্ব তুলে ধরে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের প্রেক্ষিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনি ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। পাশাপাশি বামপন্থিদের সাম্প্রতিক কিছু আন্দোলনের সমালোচনাও করেছেন তিনি।
প্রেস সচিব মন্তব্য করেছেন, “ফুলবাড়ি, দীঘিপাড়া ও জামালগঞ্জ—এই বড় কয়লা মজুতগুলো আমরা না তোলাটা বড় ভুল ছিল।”
তিনিও আরও মন্তব্য করেছেন, “ইতিহাসগতভাবে তারা (বামপন্থিরা) শ্রমজীবী মানুষের জন্য বড় কোনো অগ্রগতি আনতে পারেনি।”
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
পোস্টের শুরুতেই তিনি বলেন, “সুস্থ গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো ভালো বিতর্ক; ব্যক্তিগত আক্রমণ কেবল অসহিষ্ণুতাকে উসকে দেয়।”
পোস্টে প্রেস সচিব জানান, “ফুলবাড়ী হত্যাকাণ্ডের খবর সম্ভবত প্রথম আমি-ই বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে প্রকাশ করি। এখনও মনে আছে, কতটা জোরাজুরি করতে হয়েছিল পুলিশকে স্বীকার করাতে যে কয়েকজন প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন। তখন আমি ছিলাম ঢাকায় এএফপি’র প্রতিনিধি। সংবাদটি যুক্তরাজ্যে ব্যাপক সাড়া তোলে, কারণ এশিয়ান এনার্জি—যারা প্রকল্পটির প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছিল—তারা লন্ডন তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি ছিল।”
পোস্টে তিনি লেখেন, “আমি তখন যেমন হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছি, আজও সেই নিন্দা করছি। বহু বছর ধরে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড প্রতিবাদ মোকাবিলায় অত্যধিক বলপ্রয়োগের প্রবণতা দেখিয়েছে। এই সহিংসতার চক্র ভাঙতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে।”
সম্প্রতি ফুলবাড়ী ওপেন-পিট খনন প্রকল্প নিয়ে তার ব্যক্তিগত লেখাকে ঘিরে আলোচনার পর তিনি তার লেখার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “ফুলবাড়ী ওপেন-পিট খনি প্রকল্প নিয়ে আমার সাম্প্রতিক ব্যক্তিগত লেখাটি এসেছে সরকারের সঙ্গে কাজ করার ১৬ মাসের অভিজ্ঞতা থেকে। বাংলাদেশ এখনও স্বল্পোন্নত দেশ; আমাদের অনেক আন্দোলন-সংগ্রামে এই বাস্তবতা উপেক্ষিত থাকে। আমি যদি এখনো এএফপি-তে হতাম, সম্ভবত যে অবস্থানে আজ দাঁড়িয়ে আছি, তাকে কঠোরভাবেই সমালোচনা করতাম।”
জ্বালানি নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “জ্বালানি নিরাপত্তা একটি দেশের প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য—সরকারে যুক্ত হওয়ার পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিশ্বের এক অংশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়লেই অন্য অঞ্চলে এলএনজি ও জ্বালানির দাম হু-হু করে বাড়ে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর আমাদের এলএনজি কিনতে হয়েছে স্বাভাবিক দামের পাঁচ থেকে দশ গুণ দামে। সেই মূল্যে এলএনজি কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তখন পথ ছিল দুইটি—রিজার্ভ খরচ করে এলএনজি কিনব, নাকি মাসের পর মাস কারখানা বন্ধ রাখব।”
“গত দুই দিনে আমার লেখাকে কেন্দ্র করে যে চিন্তাপূর্ণ সমালোচনা এসেছে, তাকে স্বাগত জানাই। মাহতাব উদ্দিন আহমেদসহ অনেকেই আমার যুক্তির ঘাটতিগুলো তুলে ধরেছেন। তাদের পরিশ্রম ও বিশ্লেষণকে আমি মূল্যায়ন করি।”
“তা সত্ত্বেও আমি এখনও মনে করি—আমরা আমাদের বড় কয়লা মজুত, যেমন ফুলবাড়ী, দিঘিপাড়া ও জামালগঞ্জ—সংগ্রহ না করে বড় ভুল করেছি। এশিয়ান এনার্জির চুক্তিতে ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করে নতুন অংশীদার—যেমন বিএইচপি বিলিটন বা রিও টিন্টো—খুঁজে নেওয়া যেত। ২০০৬ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬০০–৭০০ ডলার। আমরা তখনও দারিদ্র্য থেকে মাথা তুলতে চেষ্টা করছিলাম। ফুলবাড়ী আন্দোলন আমাদের কয়লা আকাঙ্ক্ষার শেষ ছিল না; ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে আমরা বরং বড় কয়লা আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছি।”
“কিছু সমালোচক ভুলে গেছেন—এই লেখা আমি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে লিখেছি। এটি সরকারী নীতি নয়। আমার জানা মতে, সরকার ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করার কোনও পরিকল্পনা করছে না। লেখাটি ছিল কেবল ব্যক্তিগত প্রতিফলন।”
বাম রাজনীতির মানবাধিকার, সংখ্যালঘু অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, “মানবাধিকার, সংখ্যালঘু অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় শক্ত অবস্থানের জন্য আমি সবসময় বামপন্থীদের শ্রদ্ধা করেছি। এএফপি–তে থাকা অবস্থায় এসব বিষয়ে বহু প্রতিবাদে আমি নিজেও অংশ নিয়েছি। তাদের আবেগ ও দায়বদ্ধতা মূল্যবান।”
পাশাপাশি বামপন্থিতের আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তবে অর্থনৈতিক অনেক বিষয়ে আমি মনে করি, বামপন্থীরা বড় ধরনের ভুল করেছে। তাদের আন্দোলন সবসময় বাস্তবসম্মত ফল এনে দিতে পারেনি। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন অনেকটা ‘লুডাইট প্রবণতা’র মতো। ইতিহাস বলছে—শ্রমজীবী মানুষের জন্য বড় অগ্রগতি যেমন গার্মেন্টসে শিশুশ্রম বন্ধ, নিরাপত্তা বাড়ানো, বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা—এসব এসেছে মূলত পশ্চিমা ক্রেতা ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর চাপের কারণে, আমাদের বামপন্থী আন্দোলনের কারণে নয়।”
