৭ দিনের জন্য রাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ প্রত্যাহার
রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯:১৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৩৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সাত দিনের জন্য চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ প্রত্যাহার করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অফিসার্স সমিতি। এই সময়ের মধ্যে 'পোষ্য কোটা' পুনর্বহাল ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ প্রত্যাহারের কথা জানান অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) আমাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় বসেন। সেখানে আমাদের দাবির বিষয়ে তারা কয়েকদিন সময় চেয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ (বুধবার) আমরা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসি, সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে প্রশাসনকে সাত দিনের সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাই দুপুর ১টা থেকে আমরা শাটডাউন প্রত্যাহার করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “এই সময়ে যদি প্রশাসন আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করতে না পারে তাহলে পরবর্তীতে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে তাহকে এই দায়ভার শুধুই প্রশাসনকে নিতে হবে।”
তবে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ প্রত্যাহার হলেও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম তাদের ঘোষিত ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতের কর্মসূচি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা এখনো আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করিনি। অফিসার্স সমিতি কী করল সেটা আমরা দেখব না। আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব।"
এদিকে শাটডাউনের প্রতিবাদে বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে মানববন্ধন করেছে শাখা ছাত্রশিবির।
সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফরসাল বলেন, “ক্যাম্পাসের যে অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে তা পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য রাকসু নির্বাচনকে তিন তিনবার পেছানো হয়েছে।”
‘শাটডাউন’ কর্মসূচিকে ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক’ দাবি করে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “রাকসু নির্বাচন পেছানোই তাদের আসল উদ্দেশ্য নয়, মূল লক্ষ্য হলো একে পুরোপুরি বানচাল করা। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮, তারপর ২৫ সেপ্টেম্বর হয়ে এখন ১৬ অক্টোবর এভাবে বারবার তারিখ বদলে তারা সময়ক্ষেপণ করছে। শেষে হয়তো ঘোষণা দেবে, এ বছর রাকসু আর সম্ভব নয়। ৩৫ বছর পর নির্বাচন বানচালের এ প্রচেষ্টা শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।"
উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য স্থায়ীভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু ১৩ আগস্ট থেকে ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালসহ আট দফা দাবিতে রাবির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি অংশ কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে ২৪ থেকে ২৬ আস্ট পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়।
পরে ২৪ আগস্ট প্রশাসনের আশ্বাসে তিন দিনের অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের প্রচারের মধ্যেই গত ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ 'পোষ্য কোটা' পুনর্বহাল না করা হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর ভর্তি কমিটির সভায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের শর্তসাপেক্ষে ‘পোষ্য কোটা’য় ভর্তির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়।
কিন্তু পরদিন বিকেল থেকে ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে অনশনে বসেন ৯ শিক্ষার্থী।
পরে ২০ সেপ্টেম্বর শনিবার ‘পোষ্য কোটা’ পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এদিন রাতেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে 'পোষ্য কোটায়' ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করে প্রশাসন এবং পরদিন রবিবার সিন্ডিকেটের সভায়ও তা স্থগিত রাখা হয়।
এরপর রবিবার রাতে 'পোষ্য কোটা' পুনর্বহাল, শিক্ষক লাঞ্ছিতের চার এবং জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় অফিসার্স সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
তবে জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন 'শিক্ষক পরিষদ' নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের ঘোষণা দেয়।
এসব আন্দোলন-পাল্টা অন্দোলনের মধ্যে 'ভোটার অনুপস্থিতি’র কারণ দেখিয়ে সোমবার রাকসুর ভোট ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর করার ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন।