স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনা এবং একটা নক্ষত্রের পতন...
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:০৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৯৭২ সালে জন্ম মেঘালয়ের তুরাতে। পরে পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন আসমে। মা গায়িকা। বাবা গীতিকার, কবি। বড় হওয়া সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। গান ছিল তাঁর রক্তে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সঙ্গীত কন্ডাক্টর জুবিন মেহতার নামানুসারে নাম রাখা হয় তাঁর। তিনি জুবিন গর্গ।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে সিঙ্গাপুরে নর্থইস্ট ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করার কথা ছিল জুবিন গর্গের। দুপুর নাগাদ স্কুবা ডাইভিংয়ে গিয়েছিলেন। নেহাৎই শখপূরণ করতে। কিন্তু সেটাই কাল হলো, আর ফেরা হলো না গানের মঞ্চে। সূত্রের খবর, শুক্রবার দুপুর দেড়টা নাগাদ স্কুবা ডাইভিং করতে নেমেছিলেন জুবিন। সমুদ্রের মধ্যেই শুরু হয় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। সিঙ্গাপুর পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তবে ব্যর্থ চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা। আইসিইউতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তাঁর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, "সঙ্গীতের প্রতি তাঁর অসাধারণ অবদান সকলে মনে রাখবেন।" জুবিন বলতেন, "আমি বলিউডকে পছন্দ করি না। কারণ, মুম্বইয়ে থাকা মানেই অর্ধেক জীবন ট্রাফিক জ্যামেই চলে যাবে। কংক্রিটের জীবনের চেয়ে ঢের ভালো লাগে পাহাড়ে থাকতে।"
বয়স হয়েছিল তাঁর মাত্র ৫২ বছর।শুক্রবার দুপুরে শিল্পীর আকস্মিক প্রয়াণের খবরে মুষড়ে পড়েন অনুরাগীরা। আসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, "জুবিন গর্গের প্রয়ান আসমের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। ও যে শূন্যস্থান রেখে গেল, তা অপূরণীয়।"
জুবিনই ছিলেন প্রথম শিল্পী যিনি উত্তর-পূর্বের প্রত্যেকটি রাজ্যের জন্য গেয়েছিলেন। ১২টি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। "গ্যাংস্টার" ছবির "ইয়া আলি" গানটি জুবিনের কেরিয়ারে মাইলস্টোন। এছাড়া "কৃষ ৩" ছবির "দিল তু হি বাতা"র মতো একাধিক গান দীর্ঘদিন মনে রাখবেন শ্রোতারা। বাংলাতেও তাঁর গানের সংখ্যা কম নয়। "পরাণ যায় জ্বলিয়া রে", "চিরদিনই তুমি যে আমার"র মতো একাধিক ছবির গান তাঁর পরিচিতি বাড়িয়েছে কয়েকগুন।
জুবিন তাঁর তিন দশকের কেরিয়ারে গান গেয়েছেন ৪০টিরও বেশি ভাষায়। কণ্ঠই তাঁকে ‘সাংস্কৃতিক আইকন’ হিসেবে জনপ্রিয়তা দিয়েছে। তবে কেবল গায়ক হিসেবেই নন, গীতিকার কম্পোজার, সঙ্গীত পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, কবি... নানা ভূমিকায় সমৃদ্ধ করেছেন ভারতীয় সংস্কৃতি অঙ্গনকে।
তিনি ছিলেন বড় মনের মানুষ।করোনাকালে সাধারণের জন্য খুলে দিয়েছিলেন তাঁর বাড়ির অন্দরমহল। সাফল্যের মাঝেও বিতর্ক জুবিনের পিছু ছাড়েনি। হেসে বলতেন, ‘আই অ্যাম আ ম্যান অব কন্ট্রোভার্সি’। তাঁর এই স্বাধীনচেতা স্বভাব মনে রাখবেন অগণিত ভক্ত। ওপারে ভালো থাকবেন সাংস্কৃতিক নক্ষত্র শিল্পী জুবিন গর্গ।