বর্তমান সরকারের আচরণে প্রতিহিংসার রাজনীতি তৈরি হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫:০৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুবপ্রাণ জাগিয়ে তুলুন, ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ-অভ্যুত্থানের অর্জন রক্ষা করুন, ইনসাফ ও মুক্তির পথে এগিয়ে চলুন– এই শ্লোগানে বাংলাদেশ বিপ্লবী যুব সংহতির আয়োজনে জাতীয় যুব কনভেনশন ২৬ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার রাজধানীর ইন্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও কনভেনশনের প্রধান অতিথি ড. সাইফুল হক বক্তৃতার শুরুতে শহীদ বদিউজ্জামান ও শহীদ আব্দুল লতিফকে স্মরণ করে উপস্থিত শহীদ বদিউজ্জামানের স্ত্রী আদুরি বেগমকে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শ্রমজীবী শহীদরা কোন ভাগ চাননি। গত ১৪ মাসে সরকার তাদের কোন সহযোগিতা করেনি। এই অভ্যুত্থানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই শেষে বৈষম্য বেড়েছে। আমাদের রাজনৈতিক দলসহ লক্ষ লক্ষ মানুষ মাঠে নেমেছে৷ কিছু ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রকট হয়েছে। তরুণদের জন্য কোন কর্মসংস্থান হয়নি। তাদেরকে এখন মবসন্ত্রাসে, চাঁদাবাজিতে ব্যবহার করছে। আমি তরুণদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আপনারা কি অতীতের মতো ব্যবহৃত হতে থাকবেন নাকি ঘুরে দাঁড়াবেন। হাসিনা গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছেন, তাই গণ অভুত্থান ছাড়া তাকে তাড়ানোর কোন উপায় ছিল না। মানুষ অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছে৷ পরে বিজয়ী হয়ে অনেকে লুটেরা হয়েছে। এটা লক্ষ্য ছিল না। অভ্যুত্থান নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে। কেবলমাত্র বিজয়কে সঙ্গী করে আপনারা যে অপরাধ করেছেন তার জবাব দিতে হবে। হাসিনার চেয়ে বেশি সফরসঙ্গী নিয়ে ড. ইউনূস জাতিসংঘে গেছেন৷ আমি আওয়ামী লীগকে বলতে চাই, দেশে আপনারা চোরাগুপ্তা হামলা চালাচ্ছেন, বিদেশেও তাই করছেন৷ এভাবে আওয়ামীলীগ দেশে ফিরতে পারবে না। বর্তমান সরকার যা আচরণ করছে এতে প্রতিহিংসার রাজনীতি তৈরি হচ্ছে। লাশ তুলে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। যেখানে নারীরা, বাউলরা, সাংস্কৃতিক কর্মীরা সুন্দর জীবন পাবে না এমন দেশের জন্য আমরা গণ অভ্যুত্থান করিনি। সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই পরিস্থিতি না বদলালে এই যুবরা আবার প্রতিবিপ্লব করবে।''
বিশেষ অতিথি জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান বলেন, যুবসমাজ ইতিহাসের প্রতিটি যুগেই বিশ্বের শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। কারণ তারা শক্তি, উদ্যম, কল্পনা, প্রতিবাদী মনোভাব ও নতুন পৃথিবী গড়ার সাহস বহন করে। আজকের যুব সমাজকে শাসক শোষক লুটেরা শ্রেণির বিরুদ্ধে জেগে উঠে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে না ওঠা পর্যন্ত ঘরে না ফেরার আহ্বান জানাই। তিনি আরও বলেন, এই সরকার এক অদ্ভুত রহস্যময়ী, এই সরকার পরাবাস্তববাদী, এই সরকারের মধ্যে জাদুবাস্তবতা কাজ করে। যা জনগণ বোঝে না।"
বিপ্লবী যুব সংহতি কনভেনশনের সভাপতি বাবর চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ৩৫ লক্ষ যুব বেকার। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে। এদেরকে সরকার কাজে লাগাতে না পারলে সুন্দর বাংলাদেশ তৈরি কোনদিন সম্ভব নয়। আমি অবিলম্বে সরকারকে এই যুবদের চাকরি দেবার দাবি জানাচ্ছি।"
শ্রমজীবী নারী সংহতির সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে স্বপ্ন আমরা দেখেছি তা চুরি হয়ে গেছে। যুবরা যে প্রতারিত হয়েছে তা থেকে জন্ম নিয়েছে মবসন্ত্রাস। এখন সমাজ নষ্টদের দখলে চলে গেছে। আমাদের এখন একগুচ্ছ সৃষ্টিশীল, সাহসী মানুষের দরকার।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক
ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বাংলাদেশ গঠনে প্রতিটি আন্দোলনে আত্মাহুতি দিয়েছে শ্রমজীবী মানুষ। আপনারা যে কনভেনশন করবেন সেখানে শ্রমজীবীর মুক্তি কীভাবে হবে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার করণীয়, অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে সর্বজনীন রাষ্ট্রীয়ব্যবস্থা কীভাবে হতে পারে, যুবদের বেকারত্ব নিরসনে ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং সকল পেশা সম্মানের এই বোধ জাগ্রত করতে কাজ করবেন।"
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোশরেফা অদিতি হক বলেন, কোন দেশ একা একা তৈরি হয় না। দেশটাকে তৈরি করতে হয়৷ আমাদের দেশটাকে এই যুবদেরই সংগঠিত হয়ে তৈরি করতে হবে৷''
কনভেনশনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতির সভাপতি মীর মোফাসসর হোসেন মোস্তাক, বিপ্লবী কৃষক সংহতির সভাপতি আনসার আলী দুলাল, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের সভাপতি শেখ আব্দুন নূর, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সম্পাদক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
জাতীয় যুব কনভেনশনের ১৬ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। উদ্বোধনী শেষে রালীতে অংশ নেন৷ যুবরা।