জোরপূর্বক চুল কেটে দেওয়া ব্যক্তির পরিচয় মিলেছে
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭:১৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এক বৃদ্ধকে ধরে জোর করে ধরে তার জট, চুল ও দাড়ি কেটে দেওয়া হচ্ছে। তিনি নিজের শক্তি দিয়ে ওই লোকগুলোর কাছ থেকে ছুটার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত অসহায়ের মত বলছিলেন, ‘আল্লাহ, তুই দেহিস।’
ওই ভিডিওতে এই দৃশ্য দেখে দেশে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ঘটনাটির ব্যাপক সমালোচনা করা হচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিচ্ছে। দোষীদের শাস্তি দাবি করা হচ্ছে।
ওই ভিডিওতে যে বৃদ্ধের জট চুল ও দাড়ি কেটে দেওয়া হচ্ছে, তার পরিচয় মিলেছে। জানা গেছে কবে কোথায় ও কিভাবে ও কারা এই ঘটনা ঘটান।
ঘটনাটি কোরবানির ঈদের আগের। ওই বৃদ্ধের নাম হালিম উদ্দিন। তিনি একজন বাউল ফকির। ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে তাকে জোর করে ধরে তার জট, চুল ও দাড়ি কেটে দেওয়া হয়।
৭০ বছর বয়সী হালিম উদ্দিন সাধারণত ‘ফকিরি’ জীবনে থাকেন এবং স্থানীয়ভাবে সকলেই তাকে চেনেন। তিনি মানসিকভাবে সুস্থ। তার উপর এই আক্রমণকে স্থানীয়রা অন্যায়ের উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করছেন।
দীর্ঘ ৩৭ বছর যাবৎ জট ছিলো তার মাথায়। হজরত শাহজালাল (রঃ) ও শাহ্ পরাণ (রঃ) এর ভক্ত তিনি। একসময় তিনি কৃষিকাজ করতেন। কিন্তু এখন ‘ফকিরি’ হালে থাকেন। নানা স্থানে ঘুরে বেড়ান। একদিন কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ করেই একদল লোক তাকে জাপটে ধরে। এবং মেশিন দিয়ে তার মাথার জট, দাড়ি ও চুল জোর করে কেটে দেয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, “সমাজে প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনতার প্রতি হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। হালিম উদ্দিনের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণ অন্যায়।”
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর ) বিকালে হালিম উদ্দিনকে দেখতে গিয়েছিলেন ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, “হালিম ভাই তরিকায়ে নক্সবন্দিয়া ধারায় অনুরক্ত। বর্তমানে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে আমরা ময়মনসিংহ বাউল সমিতির পক্ষ থেকে এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তির দাবি করছি।”
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন বলেন, “যারা আমার চুল কাটছে তারা বালার লাইগ্যা করছে, অহন আমি কী করবাম। আমার তো শক্তি কোলাই না। ৮-১০ জনে ধইরাললে কী করণ। আমারে ফালায়া দিয়া হুতাইয়া চুল কাটছে। হেইবালা আমি বেহুঁশ হয়ে গেছিলাম। মানুষ চিনতে পারি না হেইবালা। হেই থাইক্কা আমি কামকাজ করতে পারি না, বাজারে আইতারি না, ঘর-বৈঠক আমি। নিজেরে আড়াল কইরা চলছি।”
তারাকান্দা থানার ওসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৃদ্ধ হালিম উদ্দিনের ওপর এই ঘটনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হালিম উদ্দিন বর্তমানে নিজেকে ‘ঘরবন্দি’ করে রেখেছেন এবং সামাজিক আক্রমণ থেকে নিজেকে আলাদা রাখছেন।