শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

যে কারণে স্বজাতি ছেড়ে চলে যান ইউনুস নবী

মাইসারা জান্নাত

প্রকাশ: ১৯:০১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:০৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যে কারণে স্বজাতি ছেড়ে চলে যান ইউনুস নবী

আল্লাহর প্রেরিত নবীদের একজন ইউনুস (আ.)। তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন ইরাকের মুসেল নগরীর নীনাওয়া জাতির প্রতি। তিনি নিজ কওমকে আহ্বান করেছিলেন এক আল্লাহর ইবাদত করতে এবং  শিরক থেকে মুক্ত থাকতে। কিন্তু জনগণ তার ডাকে সাড়া দেয়নি। বরং তারা অবাধ্যতা প্রদর্শন করে এবং তার দাওয়াত উপেক্ষা করে। বারবার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। তখন আল্লাহর নির্দেশে তিনি জনপদ ত্যাগ করেন এবং তাদেরকে সতর্ক করে দেন যে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের ওপর আল্লাহর আজাব নাজিল হবে।

ইউনুস (আ.) কওমকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আল্লাহর আজাবের লক্ষণ তাদের সামনে দেখা দেয়। আকাশে মেঘের মতো আজাবের ছায়া নেমে এলে তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যায়। হঠাৎ তারা উপলব্ধি করে, নবী কখনো মিথ্যা বলেন না। তাই তারা দ্রুত আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। সকল নারী-পুরুষ, শিশু, এমনকি পশুপাখি নিয়েও তারা মাঠে জড়ো হয়। তারা বাচ্চাদের ও গবাদিপশুদের আলাদা করে দেয়, যাতে তাদের কান্নাকাটি আরও বেদনাদায়ক হয়। এরপর তারা আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতি করে কাঁদতে থাকে, সর্বান্তকরণে তওবা করে এবং আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাদের এই আন্তরিক তওবা কবুল হয়। ফলে আল্লাহ তাদের ওপর থেকে আজাব উঠিয়ে নেন।

অন্যদিকে ইউনুস (আ.) পথ চলতে চলতে বিভিন্ন লোকের কাছে নিজের কওমের খবর জানতে থাকেন। যখন শুনেন আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, তখন তিনি দুঃখভারাক্রান্ত হন। কারণ তার কওম তাকে মিথ্যাজ্ঞান করেছিল, অথচ এখন তারা রক্ষা পেয়েছে। সেই অসন্তুষ্টির কারণে তিনি কওমের নিকট ফিরতে অপছন্দ করলেন এবং অন্যত্র চলে গেলেন।

কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, তিনি নিজ উম্মতকে যে আজাবের কথা বলেছিলেন, তা আসেনি। এতে তিনি স্বজাতির কাছে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন হবেন। আর তখন মিথ্যা বলার শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। তাই তিনি আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষা না করে অন্যত্র চলে যান। আর এই ভ্রমণের মধ্যেই ঘটে তার জীবনের সেই ঘটনা, যেখানে সমুদ্রযাত্রা, লটারিতে নাম ওঠা এবং মাছের পেটে বন্দিত্ব বরণ করতে হয়।

আল্লাহর হুকুমের পূর্বে স্বাজতি ত্যাগ করায় আল্লাহ তাকে সংশোধন করেন। নৌকায় যাত্রাকালে ঝড় ওঠে এবং যাত্রীদের একজনকে সমুদ্রে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। লটারিতে বারবার ইউনুস (আ.)-এর নাম উঠে। তখন তাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়। আল্লাহর নির্দেশে একটি বিশাল মাছ তাকে গিলে ফেলে। তবে এটি কোনো শাস্তি ছিল না, বরং নবীর জন্য শিক্ষা ও আদব প্রদানের একটি বিশেষ ব্যবস্থা। মাছের পেটে অবস্থানকালে তিনি চারদিক থেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলেন। সেই সময়ে তিনি গভীরভাবে তওবা করেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জালিমীন।’ অর্থাৎ আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি পবিত্র, মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম জালেম। (সুরা আম্বিয়া ৮৭)

এই দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। ফেরেশতারা তার তাসবিহ শুনে আল্লাহর কাছে তার মুক্তির জন্য সুপারিশ করেন। অবশেষে আল্লাহ মাছকে নির্দেশ দেন তাকে নিরাপদে তীরে ফেলে দিতে। তিনি অসুস্থ দেহে সমুদ্রতীরে উঠে আসেন এবং আল্লাহর কৃপায় আবার সুস্থ হয়ে যান।

ইউনুস (আ.)-এর কাহিনি আমাদের শিক্ষা দেয়, আল্লাহর নবীরাও কখনো আবেগের কারণে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তাদের ভুল সাধারণ মানুষের মতো নয়, বরং উচ্চতর মর্তবায় ক্ষুদ্রতম বিচ্যুতিও আল্লাহর কাছে গুরত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এজন্যই ইউনুস (আ.)-কে মাছের পেটে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

তথ্যসূত্র : তাফসিরে আহসানুল বয়ান

আরও পড়ুন