শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

মৃত্যুর স্মরণে কোমল হয় কঠিন হৃদয়

মাইসারা জান্নাত

প্রকাশ: ২০:১১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০০:৩৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মৃত্যুর স্মরণে কোমল হয় কঠিন হৃদয়

মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করায়। পৃথিবীতে মানুষ যতই ব্যস্ত হোক না কেন, যতই সম্পদই অর্জন করুক না কেন, একদিন তাকে এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমরা প্রতিদিন মৃত্যুসংবাদ শুনি, কারো কারো জানাজায় অংশ নিই, কবরস্থানে যাই। তখন অন্তর কিছুটা নরম হয়, দুনিয়ার মোহ কিছুক্ষণের জন্য দূরে সরে যায়। কিন্তু সময়ের স্রোতে সেই অনুভূতি দ্রুত ম্লান হয়ে যায়। আবার আমরা ভোগ-বিলাস, অর্থ-সম্পদ ও নতুন পরিকল্পনায় ডুবে যাই। অথচ মৃত্যু কেবল অন্যের জন্য নয়, আমাদের প্রত্যেকের জন্যও নিশ্চিত এক বাস্তবতা।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন, প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুকে স্মরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করো, কারণ এটি পাপ মোচন করে এবং দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ কমায়। (ইবনে মাজাহ) অর্থাৎ মৃত্যু মানুষকে তওবার দিকে ধাবিত করে, অন্তরকে নম্র করে এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি মনোযোগী করে।

যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা মনে রাখে, তার অন্তর সহজে গুনাহের দিকে ধাবিত হয় না, ভাগ্যে যা আছে তাতেই সে সন্তুষ্ট থাকে এবং ইবাদতে আগ্রহী হয়। অন্যদিকে মৃত্যুকে ভুলে যাওয়া মানুষ তওবায় অলস হয়ে পড়ে, অসন্তুষ্টিতে ভোগে এবং ইবাদতে গাফেল হয়ে যায়।

মৃত্যুর অনিশ্চয়তা মানুষকে প্রস্তুতির দিকে আহ্বান জানায়। কেউ জানে না কবে, কোথায়, কীভাবে মৃত্যু আসবে। কেউ হাসতে হাসতে, কেউ কথা বলতে বলতে কিংবা ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, তোমরা যেখানেই থাকো, মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের স্পর্ষ করবে, এমনকি যদি তোমরা সুরক্ষিত দুর্গেও থাকো। তাই মৃত্যুর স্মরণ একদিকে ভয় জাগায়, অন্যদিকে সৎপথে ফিরিয়ে আনে।

মৃত্যুকে স্মরণ করার ব্যবহারিক উপায়ও আছে। কবরস্থান জিয়ারত করলে অন্তর নরম হয়, আখেরাতের কথা মনে পড়ে। মৃত্যুসংবাদ শুনে ধৈর্যধারণ করা, নিয়মিত নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির ও দান-সদকা করা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতির অংশ। এভাবেই মানুষ মৃত্যুর স্মরণে জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে।

অতএব মৃত্যুর কথা বারবার স্মরণ করা উচিত। এটি আমাদের কঠিন হৃদয়কে কোমল করে, পাপ থেকে দূরে রাখে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সাহায্য করে। মৃত্যুর স্মরণই মানুষের জীবনকে প্রকৃত অর্থে সার্থক করে তোলে।

আরও পড়ুন