শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

মক্কা নগরীর জন্য যে দোয়া করেছিলেন ইব্রাহিম (আ.)

মাইসারা জান্নাত

প্রকাশ: ১০:২৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১০:৩০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মক্কা নগরীর জন্য যে দোয়া করেছিলেন ইব্রাহিম (আ.)

পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও নিরাপদ নগরী মক্কা। এই নগরীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নবী ইব্রাহিম (আ.)-এর জীবন, ত্যাগ, দোয়া এবং আল্লাহর বিশেষ কৃপা। পবিত্র কাবা নির্মাণের পর ইব্রাহিম (আ.) মহান আল্লাহর কাছে যেসব বিষয়ে দোয়া করেছিলেন সেগুলোর অন্যতম হলো, মক্কা নগরীর নিরাপত্তা এবং মক্কাবাসীর রিজিকের ব্যবস্থা।

আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ১২৬ নম্বর আয়াতে ইব্রাহিম (আ.)-এর একটি দোয়া বর্ণনা করেছেন। তিনি আল্লাহর দরবারে বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! এ নগরীকে নিরাপদ করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে তাদেরকে ফলমূল দ্বারা রিজিক দান করুন।’

এই দোয়া থেকে দুটি বিষয় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। প্রথমত, ইব্রাহিম (আ.) মক্কার শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করেছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি এর অধিবাসীদের জন্য রিজিক তথা জীবিকা সমৃদ্ধির প্রার্থনা করেছেন।

মক্কা ভৌগোলিকভাবে মরু অঞ্চল। এখানে কৃষি উৎপাদনের সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু আল্লাহর হেকমতের কারণে আজ বিশ্বের সব জায়গা থেকে বিভিন্ন ফলমূল ও খাদ্যসামগ্রীর আগমনে ভরপুর মক্কা। সারা বছর এই নগরীতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে জিনিসপত্র এসে পৌঁছায়। এটি ইব্রাহিম (আ.)-এর দোয়ারই বাস্তব প্রতিফলন।

নিরাপত্তার জন্য তার প্রার্থনা ছিল আরও তাৎপর্যময়। ইতিহাসে আমরা দেখি, চারপাশের আরব ভূমি দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ ও লুণ্ঠনের মধ্যে থাকলেও মক্কা ছিল শান্ত ও নিরাপদ স্থান। আল্লাহর ঘর কাবার বরকতে এই শহরকে নিরাপদ নগরীতে পরিণত করা হয়েছিল। ইব্রাহিম (আ.)-এর দোয়ার মাধ্যমে এই শহরের জন্য যে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছিল, তা আজও বহমান।

তবে ইব্রাহিম (আ.)-এর দোয়ার আরেকটি দিকও কোরআনে এসেছে। তিনি শুধু মুমিনদের জন্য রিজিক কামনা করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘যে অবিশ্বাসী, তাকেও আমি সামান্য সময়ের জন্য ভোগ করতে দেব, তারপর তাকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে ঠেলে দেব। আর তা কতই না নিকৃষ্ট গন্তব্য।’ এটি প্রমাণ করে, আল্লাহ দুনিয়াতে সবাইকে রিজিক দেন। মুমিন বা কাফের, সবাই তার দয়ার ছায়ায় জীবিকা পায়। তবে পরকালে প্রকৃত সফলতা কেবল ইমানদারদের জন্যই নির্ধারিত।

ইব্রাহিম (আ.)-এর দোয়া আমাদের শিক্ষা দেয়, শান্তি ও নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। একইসঙ্গে জীবিকার ব্যবস্থা ছাড়া জীবন ধারণ সম্ভব নয়। তাই আল্লাহর নিকট দোয়া করার সময় শুধু আধ্যাত্মিক কল্যাণ নয়, পার্থিব জীবনের জন্যও কল্যাণ কামনা করা উচিত। সর্বোপরি প্রকৃত কল্যাণ লাভ সম্ভব কেবল ইমান ও আল্লাহর প্রতি সমর্পণের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন