নিউইয়র্কে মুসলিম ঐতিহ্যের আলোকবর্তিকা
মাইসারা জান্নাত
প্রকাশ: ১২:৪৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশ্বের সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটি। এ শহরের আকাশছোঁয়া বর্ণিল ইমারত এবং ব্যস্ততম রাস্তাগুলো যেমন নগরের প্রাণ স্পন্দিত করে, তেমনই পূর্ব হারলেমে রয়েছে শান্তির নিকেতন ইসলামিক কালচারাল সেন্টার মসজিদ, যা মুসলিম ঐতিহ্যের আলোকবর্তিকা হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মিলনস্থল, যেখানে ধর্ম, শিক্ষা ও সংহতির সমন্বয় ঘটেছে। শহরের ব্যস্ত জীবনযাত্রার মাঝেও এটি যেন প্রতীকী এক হ্রদ, যেখানে মানুষের মন শান্তি খুঁজে পায় এবং ধর্মীয় অনুশীলনে সামাজিক বন্ধন শক্ত হয়।
ইসলামিক কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালে। এর আগে থেকেই নিউইয়র্কের মুসলিম সম্প্রদায় ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং তারা নিজেদের জন্য একটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রত্যাশা করেছিল। এই সেন্টার শিক্ষা ক্ষেত্র হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে কোরআন শিক্ষা, ইসলামের ইতিহাস, আরবি ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি যুবকদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেন্টারের স্থাপত্যশৈলী শহরের অন্যান্য আধুনিক স্থাপত্যের সঙ্গে সুন্দরভাবে মিশে গেছে। এর মিনারগুলো যেন আকাশের দিকে নিঃশব্দ আহ্বান পাঠায়, আর প্রশস্ত প্রার্থনার হল মানুষের মনে আধ্যাত্মিক শক্তি জাগ্রত করে। সেন্টারের দেয়াল ও মেঝেতে ইসলামি শিল্পকলার সূক্ষ্ম ছোঁয়া রয়েছে। ভেতরের নকশা ও আলো-বিন্যাস এক ধরনের শৈল্পিক সামঞ্জস্য সৃষ্টি করে, যা দর্শককে প্রশান্তিতে ভরিয়ে তোলে। এটি শহরের কোলাহলের মধ্যে এক অনন্য স্থিরতার নিদর্শন।
নিউইয়র্কের ইসলামিক কালচারাল সেন্টার সামাজিক সংহতিরও কেন্দ্র। এখানে দাতব্য কার্যক্রম, স্বেচ্ছাসেবী প্রজেক্ট এবং কমিউনিটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সহায়তা, খাদ্য বিতরণ এবং শিক্ষামূলক সহায়তা, এসব কার্যক্রম সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে এই কেন্দ্রীয় স্থানের গুরুত্বকে আরও দৃঢ় করে। এটি যেমন আধ্যাত্মিক শান্তির প্রতীক, তেমনই মানবিক সহমর্মিতার প্রতীক।
বিশেষ করে ঈদ ও রমজান মাসে সেন্টারের কার্যক্রম আরও সক্রিয় হয়। অসংখ্য মুসলিম এখানে একত্রিত হয়ে প্রার্থনা ও কোরআন পাঠে অংশ নেয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রতিটি মানুষ এখানে মিলিত হয়, যেন সময়ের বাঁধা ভেঙে যায় এবং কেবল আধ্যাত্মিক অনুভূতি প্রবাহিত হয়। এ সময়ে কেন্দ্রটি শহরের এক নিভৃত কোলাহলের মধ্যে শান্তির এক দ্বীপ হয়ে ওঠে।
সেন্টারটি নতুন প্রজন্মের মুসলিমদের জন্যও শিক্ষার এক অনন্য উৎস। এখানে তারা ইসলামের মূলনীতি, ইতিহাস, নৈতিকতা এবং সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে জানে। যুব সমাজের অংশগ্রহণ ও শিক্ষার মাধ্যমে সেন্টারটি ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গঠনে সহায়তা করে। এটি প্রমাণ করে যে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান শুধু আধ্যাত্মিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যম নয়, বরং সামাজিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্র হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।
নিউইয়র্কের ইসলামিক কালচারাল সেন্টার শহরের বহুসংস্কৃতির সঙ্গে সংলাপ রক্ষা করে। এটি শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যও দরজা খোলা রাখে। দর্শকরা এখানে এসে ইসলামি সংস্কৃতি, কলা ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে। এটি ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের এক নিদর্শন হিসেবে কাজ করে।