শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

জোনায়েদ সাকি

প্রাইভেট কার চালকদের স্বীকৃতি ও ইউনিয়নের অধিকার দিতে হবে

ঢাকা প্রাইভেট কার চালক ইউনিয়নের এক বছর পূর্তিতে সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬:০৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রাইভেট কার চালকদের স্বীকৃতি ও ইউনিয়নের অধিকার দিতে হবে

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, প্রাইভেট কার চালকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, তাদের কাজের জন্য সুষ্পষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। তাদের সংগঠন ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে। আজ ২৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা প্রাইভেট কার চালক ইউনিয়নের এক বছর পূর্তিতে আয়োজিত সমাবেশে এই কথা বলেন তিনি।
ঢাকা প্রাইভেট কার চালক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহীদের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা প্রাইভেট কার চালক ইউনিয়নের উপদেষ্টা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান ও ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাসলিমা আখতার, বাংলাদেশ বহুমুখী শ্রমজীবি ও হকার সমিতির সভাপতি বাচ্চু ভূইয়া, সংগঠনের বিশেষ উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বিলকিস নাসিমা রহমান। 
সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রাইভেট কার চালানো একটা সুনির্দিষ্ট পেশা। প্রাইভেট কার চালকরা সকাল থেকে রাত অব্দি ডিউটি করেন, শ্রম দেন। কিন্তু এই পেশা এবং শ্রমের কোনো সরকারি বা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। 
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ছিল নাগরিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। গত ৫৪ বছরে এই মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যে ফ্যাসিস্ট সরকারগুলো এদেশে ক্ষমতায় এসেছিল তাদের শিরোমণি শেখ হাসিনাকে আমাদের দেশের ছাত্র শ্রমিক জনতা অভ্যুত্থান করে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। ১৯৭১ সালে আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, নাগরিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হবে, সেটা আজকে এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আবার নতুন করে আমরা দেখেছি৷  
জোনায়েদ সাকি বলেন, এই দেশের পঁচানব্বই ভাগ মানুষ খেটে খাওয়া মানুষ। কৃষক, শ্রমিক, খেতমজুর, দিনমজুর, শ্রমজীবী, শহরে-গ্রামে প্রতিদিন শ্রম দেন, সম্পদ তৈরি করেন। আমাদের দেশের এই খেটে খাওয়া মানুষরা বিদেশে গিয়ে প্রবাসী শ্রমিক হিসাবে দিন-রাত খেটে এই দেশে রেমিটেন্স পাঠান। আর তার ফলেই জিডিপি বাড়ে। তার ফলেই বাজেট বাড়ে। আমাদের সমৃদ্ধি বাড়ে। কিন্তু যারা শ্রম দিয়ে সম্পদ তৈরি করেন তাদের অধিকার পাওয়া যায় না। তাদের মর্যাদা দেওয়া হয় নাই।
তিনি বলেন, আজকে এই অভ্যুত্থানের পরে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। নতুন করে শ্রম আইন হবে। আমরা পরিষ্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, যারা শ্রম দেবে তাদের শ্রমের স্বীকৃতি থাকতে হবে। আপনারা কেবলমাত্র শিল্প প্রতিষ্ঠানের একটা সংজ্ঞা তৈরি করে তারপর আপনারা ইউনিয়ন করার অধিকার দেবেন। শিল্প প্রতিষ্ঠান যদি না হয় তাহলে শ্রমের কোনো স্বীকৃতি নাই, মূল্য নাই। এটা কোনো আইন-বিধান হতে পারে না।
জোনায়েদ সাকি বলেন, নাগরিক মর্যাদা মানে, আপনাদের প্রথমেই সকল শ্রমের স্বীকৃতির ব্যবস্থা করতে হবে। আজকে প্রাইভেট কার চালকদের জন্য কোনো নীতিমালা নেই। তারা যে শ্রম দেয়, তাদের কোনো কর্মঘণ্টা নাই। তাদের কোনো নিয়োগপত্র নাই। তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট বেতন নাই। তাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নাই। তারা রাস্তায় যদি দুর্ঘটনার শিকার হন অথবা রাস্তাঘাট ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত আয়োজনের কারণে তারা দুর্ঘটনার নামে একটা ভয়ানক বিপদজনক ফাঁদে পড়েন- তখন তাদের মৃত্যু হয় অথবা আহত হয়ে তারা পঙ্গু হয়ে যান। তাদের পরিবারকে দেখার কেউ থাকে না। 
তিনি বলেন, যখনই আপনি আরেকজনকে কোনো কাজে নিযুক্ত করবেন, সেই কাজের জন্য সুষ্পষ্ট চুক্তি থাকতে হবে। কাউকে শ্রমে যুক্ত করার চুক্তি না থাকলে তাকে যেন-তেন প্রকারে ব্যবহার করা যায়। এইভাবে ব্যবহার করা কোনো সভ্য দেশে চলতে পারে না। 
জোনায়েদ সাকি বলেন, যারা প্রাইভেট কার চালক তাদের কাজের জন্য সুষ্পষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। তাদের সংগঠন ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশের কোনো শ্রমিক, কোনো ক্ষেত্রে, কোনো পেশার মানুষ যাতে সংগঠন করার অধিকার থেকে, ইউনিয়ন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। সেইভাবে সংস্কার, আইন, বিধান, নীতিমালা আপনাদেরকে তৈরি করতে হবে।
 

আরও পড়ুন