শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

ক্লাউডিয়া কার্ডিনালে মারা গেছেন 

ইতালীয় কিংবদন্তি অভিনেত্রী 

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪:৫৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইতালীয় কিংবদন্তি অভিনেত্রী 

ইতালীয় সিনেমার সোনালি যুগের অন্যতম প্রতীকী মুখ, দ্য লেপার্ড খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেত্রী ক্লাউডিয়া কার্ডিনালে আর নেই। ফ্রান্সের নেমুরে নিজের সন্তানদের সঙ্গেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই তিউনিসিয়া-জন্মা তারকা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার এজেন্ট লরঁ সাভ্রি।

দীর্ঘ ছয় দশকের অভিনয় জীবন
১৯৩৮ সালের এপ্রিলে তিউনিসিয়ায় সিসিলিয়ান বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্ম নেওয়া কার্ডিনালে ১৬ বছর বয়সে স্থানীয় এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে আলোচনায় আসেন। “টিউনিসের সবচেয়ে সুন্দরী ইতালীয় নারী” খেতাব পাওয়ার সুবাদে তিনি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে যান, সেখান থেকেই শুরু হয় অভিনয়ের পথচলা।

প্রথমদিকে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করলেও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন। নিজের উচ্চারণ ও বহুভাষী পরিবেশের কারণে অনেক চলচ্চিত্রে তাঁর সংলাপ অন্যরা ডাব করতেন। তবু হার মানেননি কার্ডিনালে। ১৯৬৩ সালে ফেদেরিকো ফেল্লিনির ৮ ১/২ এবং লুকিনো ভিসকন্তির দ্য লেপার্ড—এই দুটি চলচ্চিত্র তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়।
ষাটের দশকে তিনি হলিউডেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ব্লেক এডওয়ার্ডসের দ্য পিঙ্ক প্যান্থার এবং সার্জিও লিওনের ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট-এ অভিনয়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দর্শক হৃদয় জয় করেন। হেনরি ফন্ডা, চার্লস ব্রনসনের মতো কিংবদন্তি অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।

খ্যাতিমান অভিনেতা ডেভিড নিভেন একবার তাকে বলেছিলেন—“ক্লাউডিয়া, স্প্যাগেটির সঙ্গে তুমিই ইতালির সেরা আবিষ্কার।”
ব্যক্তিজীবনে নানা সংগ্রামের ভেতর দিয়ে গেছেন তিনি। কৈশোরে এক সহিংস ঘটনার শিকার হয়ে গোপনে সন্তান জন্ম দেন, যাকে প্রথমে নিজের ভাই বলে পরিচয় দিতেন। পরবর্তী সময়ে প্রযোজক ফ্রাঙ্কো ক্রিস্টালদির সঙ্গে সম্পর্ক এবং বিচ্ছেদের পর পরিচালক পাসকোয়ালে স্কুইতিরির সঙ্গে দীর্ঘ সহবাসে ছিলেন। তাদের কন্যা ক্লাউডিয়াও শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত।
২০০০ সালে তাকে ইউনেস্কো গুডউইল অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নিযুক্ত করা হয় নারীর অধিকারের পক্ষে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ। ২০০২ সালে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আজীবন সম্মাননা পান। শেষ বয়সেও অভিনয় থামাননি—২০২০ সালে সুইস টিভি সিরিজ বুল এ তাকে দেখা যায়।
ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রী আলেসান্দ্রো জিউলি তাকে স্মরণ করে বলেছেন—“তিনি ইতালির সৌন্দর্য ও মহিমার প্রতীক, সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী।”

ক্লাউডিয়া কার্ডিনালে শুধু পর্দায় নয়, নিজের জীবনেও ছিলেন অনন্য দৃঢ়চেতা এক নারী। তার অভিনীত চরিত্রগুলো আজও ইউরোপীয় গ্ল্যামার ও শক্তিমত্তার প্রতীক হয়ে আছে। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন