শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

তারা ইঁদুর রাখতো চুলে 

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩:৪৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তারা ইঁদুর রাখতো চুলে 

ভিক্টোরিয়া যুগে ব্রিটেনের মেয়েদের অস্বাভাবিক বড় চুল রাখার রেওয়াজ ছিলো। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েরাই রাখতো এমন লম্বা চুল। বড় চুল রেখে তারা হতে চাইতো জার্মান রুপকথার রাপুনজেল। তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন কথা প্রচার করা হয়েছিলো, 'যেসব মেয়ে লম্বা চুল রাখবে, ঈশ্বর তাদের মাথায় উঁকুন ঢুকতে নিষেধ করে দেবে।'

এই কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মেয়েরা অনেক লম্বা চুল রাখতো। আর চুল বড় করতে তারা চুলের ভেতরে লুকিয়ে রাখতো ইঁদুর। অত্যন্ত লম্বা চুল থাকলেও যখন  স্টাইল করতে বেশি পরিমাণে চুলের প্রয়োজন হতো, তখন তারা তাদের নিজস্ব চুল দিয়ে তৈরি ইঁদুর ব্যবহার করতেন।

সে যুগে নারীর চুল তার চেহারার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হতো এবং এটি তার মর্যাদা ও নারীত্বের প্রতীক ছিলো।  বলা হতো, একজন নারীর গৌরবের মুকুট হলো তার চুল।

এখন যেমন মেয়েরা বাইরে গেলে চুল খুলে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু তখনকার দিনে তা সম্ভব ছিলো না। মেয়েরা কেবল শোবার ঘরে চুল খুলতে পারতো। এবং মহিলারা চুলের পিনগুলি বের করে লম্বা চুল আঁচড়াতেন।

আর এই চুল দেখার অধিকারও সাধারণ মানুষের ছিলো না। তার স্বামী অথবা কাজের মেয়ে তার চুল দেখতে পারতো। যদিও নারীত্ব বোঝানোর জন্য চুলের রোমান্টিক ধারণা চিত্রকর্ম এবং বিজ্ঞাপনে চিত্রিত করা হয়েছিলো। মাথা ভর্তি চুলসহ সুন্দরী মহিলাদের প্রায়ই তেলের বিজ্ঞাপনে দেখা যেতো। 

তখনো পরচুলার ব্যবহার শুরু হয়নি। মেয়েরা তাদের চুল পনেরো-ষোলো বছর পর্যন্ত ছোট রাখতে পারতো, কিন্তু তার পর বড় করতে বাধ্য করা হতো। 

ভিক্টোরিয়ান সমাজের ফ্যাশনেবল মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের মধ্যে  মহিলাদের চুলকে যৌনাবেদনময়ী ও নারীত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

দরিদ্র শ্রেণির জন্য সেই সময়ের রোগ এবং দুর্বল স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে লম্বা চুল রাখা অবাস্তব ও কঠিন ছিলো। তাই অনেক মহিলা অর্থের বিনিময়ে তাদের চুল বিক্রি করতে বাধ্য হতেন। সেই চুল দিয়ে ধনী নারীরা বড় করে খোঁপা বাঁধতেন। 

ভিক্টোরিয়ান যুগে চুলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির মধ্যে একটি ছিলো পরিচ্ছন্নতা। স্টাইল যাই হোক না কেন, চুল পরিষ্কার এবং চকচকে রাখতে হতো। তবে চুল এমনভাবে স্টাইল করা হতো, যাতে শরীর ভারসাম্যপূর্ণ দেখায়।

সে যুগে লম্বা চুলের ক্ষেত্রে কেউই সেভেন সাদারল্যান্ড সিস্টার্সকে টপকে যেতে পারেনি। ১৮৮০-এর দশকে তাদের চুল ছিলো ৩৭ ফুট লম্বা। দীঘল চুলের কারণেই তারা জাতীয়ভাবে আলোচিত হয়ে উঠে এবং চুল প্রদর্শনের মাধ্যমে সঙ্গীত পরিবেশনা করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। 

তারা চুলের যত্নের পণ্যের বিজ্ঞাপন করে বেশ ধনী হয়ে উঠেন। 

মহারাণী ভিক্টোরিয়া ১৮৩৭ সালের ২০ জুন ক্ষমতায় বসেন। ৬৩ বছর ৭ মাস তিনি ব্রিটেন শাসন করেন। ১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি তার মৃত্যুর পর ভিক্টোরিয়া যুগের অবসান ঘটে। তারপর থেকে মেয়েদের লম্বা চুল রাখাও কমতে থাকে!

১৯২০-এর দশকে এসে লম্বা চুল প্রায় হারিয়ে যায়। ধ্বংসাবশেষ হিসেবে লম্বা চুলকে তখন উপহাস করা শুরু হয় এবং চোখে পড়তো না লম্বা চুলের নারী।

আরও পড়ুন