শেষ দিন গরুর পিঠে স্কুলে গেল কিশোরী
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০২:৫০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০৫:১৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গরুর পিঠে চড়ে স্কুলে এলো এক কিশোরী। আগে কখনো এই ঘটনা দেখা যায়নি। তাই এটি মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
ডেইলি স্টার, ইউকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ব্রিটেনের ১৫ বছর বয়সী কিশোরী ক্লোই ফিটন মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রী। তার বাবা ৪৩ বছর বয়সী রবার্ট লুইস একজন কৃষক। স্কুলে তার শেষ দিন উপলক্ষে সমাপনী উৎসব আয়োজন করা হয়েছিল। এটা ওই দেশের দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি। স্কুলের প্রত্যেক শিক্ষার্থী দিনটিতে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিচিত্র সাজে সেজে আসে। বিষয়টি নিয়ে ক্লোই তার বাবা রবার্টের সঙ্গে আলোচনা করে এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেয়।
কৃষক বাবার 'ওয়েসিস' নামে পাঁচ বছর বয়সী একটি গরুর পিঠে চড়ে গ্রেটার ম্যানচেস্টারের বোল্টনে তার স্কুলের উৎসবে উপস্থিত হয় ওই ছাত্রী। এটি তার সহপাঠী ও অন্য অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ওই ছাত্রীকে গরুর পিঠে চড়িয়ে তার পঞ্চম প্রজন্মের কৃষক বাবা ও ১৯ বছর বয়সী ভাই থমাস নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে দেখতে লাগছে ঠিক রাজকুমারীর মতো।
ব্যতিক্রমী আয়োজন
ক্লোই জানিয়েছে, সে কেবল তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য অনুসরণ করেছিল। কারণ তার বড় ভাই একটি বিশাল হলুদ ট্রাক্টরে চড়ে ২০২২ সালে স্কুলের সমাপনী অনুষ্ঠানে এসেছিল।
এই কিশোরী মাত্র ছয় বছর বয়সে নিজ হাতে একটি ভেড়ার বাচ্চা জন্ম দিতে সহায়তা করেছিল। এরপর থেকেই তার মা তাকে স্নেহ করে 'মিস মু' বলে ডাকতে শুরু করেন। ক্লোই তার টিকটক অ্যাকাউন্টে গরুর পিঠে চড়ে যাওয়া ভিডিওটি শেয়ার করেছে। সেটি ৬ লাখের বেশি ভিউ হয়েছে।
ক্লোই এখন কলেজে কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা করার পরিকল্পনা করছে। সে একদিন তাদের পারিবারিক খামারের দায়িত্ব নেওয়ারও স্বপ্ন দেখে।
ক্লোই জানিয়েছে, আগের বছরগুলোতে সবাই ঘোড়া কিংবা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে এসেছিল। তাই আমি ভেবেছিলাম, এমন কিছু করব, যা আগে কেউ কখনও করেনি। আমার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সবাই খুব খুশি হয়েছিল। তাই সবার কাছ থেকে সবচেয়ে জোরে হাততালি পেয়েছি।
ক্লোই ও ওয়েসিসকে সমাপনী উৎসবে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার পরিবার ট্রেলারের মাধ্যমে বোল্টন ওয়ান্ডারার্স টাফশিট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ভেন্যু থেকে প্রায় ৪০০ গজ দূরে টেসকো গাড়ি পার্কে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা একসাথে স্কুলে হেঁটে যায়। গরুর সাথে 'অনেক অনুশীলন' করার পর সফল হয়েছিল ক্লোই। স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি না থাকায় ক্লোইকে গেট থেকেই তার গরুকে বিদায় জানাতে হয়।
৪৪ বছর বয়সী ক্লোইয়ের মা লুইস বলেছেন, আমরা সেখানে পৌঁছানোর আগে কেউ জানতো না যে সে গরুর পিঠে চড়ে যাচ্ছে। আমরা যখন সেখান থেকে ফিরে আসি, তখন সবাই গরুটির দিকে তাকিয়ে ছিল। ক্লোই গরুর পিঠে চড়ে এবং আমরা হেঁটে গেলাম।
তিনি আরও বলেন, টেসকো গাড়ি পার্কে আমরা গরুটিকে রেখেছিলাম। গরুটিকে দেখে কয়েকজন নানা প্রশ্ন করছিল। তারা ভাবছিল, কেন গাড়ি পার্কে একটি গরু আনা হয়েছে। গরুটিও বাইরে এসে ছিল খুবই খুশি। আমার ধারণা, সে এটি দারুণ পছন্দ করেছে।
রবার্ট বলেছিল, ওয়েসিসকে মাংসের বার্গারে পরিণত করার তার কোনও পরিকল্পনা নেই। তারা আশা করছেন যে সে পালে থাকার জন্য আরও বাছুর জন্ম দেবে।
তিনি আরও বলেন, সে দেখতে অসাধারণ, আমি খুবই গর্বিত। আমরা সবসময় আমাদের সন্তানদের সৎ হতে উৎসাহিত করেছি। তবে শহুরে এলাকায় কৃষকের সন্তান হওয়া সত্যিই কঠিন। নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য পরিবর্তন আনতে হবে।
কিন্তু ক্লোই সবসময় নিজের প্রতি সৎ ছিল। সে একজন সত্যিকারের কৃষকের মেয়ে। একজন কৃষক ও গরু পালনের পুরো ব্যাপারটি খুব মজার এবং অসাধারণ। ক্লোই এটা বুঝতে পারে। তাই সে দারুণ খুশি।