৬ বছরের শিশুকে ৪৫ বছরের পুরুষের বিয়ে
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০১:০৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০১:১৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রতীকী ছবি
৪৫ বছরের এক ব্যক্তি ৬ বছরের এক মেয়েশিশুকে বিয়ে করেছে। বিয়ের আগে লোকটি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় শিশুটিকে তার বাবার কাছ থেকে কিনে নেয়। খাবার কিনতে ও পরিবারের দারিদ্র ঘোচাতে ওই বাবা শিশুটিকে বিক্রি করে দেয়।
যদিও মেয়েটিকে উদ্ধার করে তার বাবার কাছে পাঠানো হয়েছে। ৯ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত শিশুটি তার বাবার বাড়িতেই থাকবে। তারপর যাবে স্বামী সংসার করতে। লোকটির আরও দুটি বউ আছে।
আমু ডট টিভির (Amu.tv) বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানায়, পারওয়ান মালিক নামে মেয়েটির বাড়ি আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে। টাকার বিনিময়ে জোর করে তাকে বিয়ে দেয়ায় তালেবানরা তাতে হস্তক্ষেপ করে। তারপর মেয়েটির বাবা আবদুল মালিক ও কোরবান নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হয়নি। তবে তারা মেয়েটির ৯ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত স্বামীর বাড়িতে যেতে বাধা দিয়েছে, যাতে তার বাবা তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ ততোদিন শিশুটি তার বাবার বাড়িতেই থাকবে। যদিও আফগানিস্তানে মেয়েদের বিয়ের কোনো ন্যূনতম বয়স নির্ধারিত নেই। আগে ১৬ বছর না হওয়া পর্যন্ত আফগান মেয়েদের বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর তা বাতিল করে দেয়।
গত বছর জাতিসংঘের নারী সংস্থা জানিয়েছে, ২০২১ সালে তালেবানরা মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করার পর আফগানিস্তানে বাল্যবিবাহ ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা আরও বলেছে, দেশজুড়ে সন্তান ধারণের হার ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তালেবান ক্ষমতায় আসার বছরে ৯ বছর বয়সী এক মেয়েকে তার বাবা ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির কাছে বাল্যবধূ হিসেবে বিক্রি করেছিলেন। একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা তাকে উদ্ধার করে।
সম্প্রতি বিয়ে বন্ধ হওয়া মেয়েটির বাবা আবদুল মালিক বলেছেন, তিনি তার কন্যাকে বিক্রি করেছেন, যাতে তিনি পরিবারের খাবারের খরচ বহন করতে পারেন।
ছোট্ট মেয়েটি বিক্রির আগে দিনরাত কাঁদছিল। স্কুলে যেতে বারবার তার বাবাকে অনুরোধ করছিল, যাতে সে ডাক্তার হতে পারে।
পারওয়ানার ক্রেতা কোরবান তার চুক্তির সময় বলেছিলেন, এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে, কিন্তু তার আরও দুটি বউ আছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিয়ের পর শিশুটির সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।
আবদুল মালিক বলেছিলেন, তার মেয়েকে বিক্রি করায় তিনি অপরাধবোধে রাতে ঘুমাতে পারছিলেন না।
মাত্র কয়েক মাস আগে পারওয়ানার ১২ বছর বয়সী বোনকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
বাচা বাজি নামে আফগানিস্তানে একটি বর্বর প্রথা আছে। সেই প্রথা অনুসরণ করে কিশোরদের মেকআপে সজ্জিত করে মেয়ে সাজানো হয়। তারপর তাকে নারীদের পোশাক পরে নাচতে ও বিনোদনের জন্য পুরুষদের কাছে পাঠানো হয়।
যারা সেখান থেকে পালিয়ে এসেছে তারা মারধর, যৌন নির্যাতন ও মানসিক যন্ত্রণার কথা বলেছে। মুখে দাড়ি গজানোর পর তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
টাকার লোভে ছোট ছেলেদের তাদের পরিবার বিক্রি করে দেয়। আবার অপহরণ করে অনেককে হারেমে নিয়ে যায়।
কিছু ছেলেকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে রাখা হয়। তাদের মালিকরা অন্য পুরুষদের দেখতে দিতে ভয় পান। কারণ তারা তাদের চুরি করার চেষ্টা করবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেয়েদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারীরা শিক্ষালয়, মসজিদ, সেমিনার, আনন্দমেলা, পার্ক ও জিমে যেতে পারবে না।
জাতিসংঘের মতে, ৭০টিরও বেশি ডিক্রি, নির্দেশনা, বিবৃতি ও নারীরা কী করতে পারবে ও কী করতে পারবে না, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
নারীদের আত্মহত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা আগামী প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
২০২৫ সাল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে চার মিলিয়নেরও (৪০ লাখ) বেশি মেয়ে শিক্ষার বাইরে থাকবে।
দ্য মিরর জানায়, সম্প্রতি নারীদের ঘরে উচ্চস্বরে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। বাইরেও তাদের কথা বলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুরুষসঙ্গী ছাড়া নারীদের বাইরে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। কোনো নারী নতুন এই নিয়ম ভঙ্গ করলে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হবে।
নারীদের মুখ ঢেকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বামী বা নিকটাত্মীয় ছাড়া অপরিচিত পুরুষ উপস্থিত থাকলে তাদের কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, পাঁচজনের মধ্যে একজন নারী বলেছেন, তারা তিন মাস ধরে তাদের পরিবারের বাইরে অন্য কোনও নারীর সাথে কথা বলেননি।
আফগান নারীরা যে মাত্রার নিপীড়নের মুখোমুখি হচ্ছেন, এর কোনও আইনি পরিভাষা নেই। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনও অপরাধ নেই, যা এর তীব্রতা ব্যাখ্যা করতে পারে।
নারীদের শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে কোনো জাতিই উন্নতি করতে পারে না। তাই নেপোলিয়ন বলেছিলেন, তোমরা আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব। কিন্তু আফগানিস্তানে সবকিছু উল্টো। সেখানে নারীদের সব মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের ঘরবন্দি করা হয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে খুব শিগগিরই দেশটি একটি অসভ্য, বর্বর ও মূর্খ জাতিতে পরিণত হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।