শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

৯৪ বছরের ‘শেষ রানি’

ইতালির পাহাড়ি গ্রামে প্রাচীন পোশাকে পর্যটকদের আকর্ষণ

সমাজকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪:০২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৪৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইতালির পাহাড়ি গ্রামে প্রাচীন পোশাকে পর্যটকদের আকর্ষণ

ইতালির মধ্যাঞ্চলের আব্রুজ্জো অঞ্চলের পাহাড়ি গ্রাম স্কান্নো। মধ্যযুগীয় এই গ্রামের অন্যতম বিস্ময় এখন একজন মানুষ—মার্ঘেরিতা চিয়ারলেত্তা। বয়স ৯৪ হলেও তিনি প্রতিদিন পরেন শতবর্ষ পুরনো ঐতিহ্যবাহী পোশাক।
গ্রামের মানুষ স্নেহভরে তাকে ডাকেন “ল’উলতিমা রেজিনা” (শেষ রানি), আর পর্যটকরা খুঁজে বেড়ান “নোনা মার্ঘেরিতা” নামে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ায় তিনি এখন হয়ে উঠেছেন এক অনন্য পর্যটন আকর্ষণ।

পোশাকের ইতিহাস ও মার্ঘেরিতার অনড় ভালোবাসা
তিনি পরেন কালো উলের গাউন, লম্বা হাতা, মাথায় সাদা ব্যান্ড।
এই পোশাকটি ছিল গ্রামীণ নারীদের প্রতিদিনের কাজের পোশাক।

বিশেষ উৎসবে স্কান্নোর নারীরা আরও জাঁকজমকপূর্ণ, সোনালি সূচিশিল্প করা পোশাক পরতেন।

মার্ঘেরিতা বলেন:“আমি ১৮ বছর বয়স থেকে এই পোশাক পরে আসছি। আমার স্বামী কখনও পছন্দ করতেন না, তবুও আমি প্রতিদিনই এটি পরেছি।”

জীবনযাপন: স্বনির্ভরতা ও গ্রামীণ গর্ব
জন্ম ও বেড়ে ওঠা স্কান্নোতেই, ১৯৫০ সাল থেকে একই পাথরের ঘরে থাকেন।
আজও নিজেই ঘরদোর পরিষ্কার, রান্না, বাগান পরিচর্যা করেন।
মাঝে মাঝে নাতি-নাতনিদের জন্য হাতের তৈরি পাস্তা ও গ্নোক্কি রান্না করেন।

তিনি বলেন:“আমি সব কাজ নিজেই করি। এখন আর কষ্টের কাজ নেই, বরং জীবন আরও স্বস্তিদায়ক।”

পর্যটক ও ঐতিহ্যের সংঘাত

গ্রামে আসা পর্যটকরা তার সঙ্গে ছবি তুলতে ভিড় করেন।
অনেক সময় দরজা খোলা থাকলে অনাহূত অতিথিদের বের করে দিতে হয়েছে তাকে।
স্থানীয় প্রশাসন চেষ্টা করছে স্কান্নোর এই ঐতিহ্যবাহী পোশাককে ইউনেস্কোর অমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে।

জনসংখ্যা হ্রাস ও হারানো কমিউনিটি
১৯২০-এর দশকে স্কান্নোর জনসংখ্যা ছিল ৪ হাজারের বেশি, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ১,৬০০-তে।
তরুণরা চাকরি ও ভালো জীবনের সন্ধানে শহর বা বিদেশে চলে গেছেন।
মার্ঘেরিতার শৈশবে জমিতে কাজ, পশুপালন, যৌথ ভোজ—সব মিলিয়ে ছিল ঘনিষ্ঠ কমিউনিটি।
আজ সেই বন্ধন আর নেই, যা তিনি খুব মিস করেন।

জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি
অতীত হারিয়ে গেলেও তিনি তাতে দুঃখ পান না। বরং আধুনিক জীবনের আরামকে উপভোগ করেন:
“আমি আগের তুলনায় আজ অনেক ভালো আছি। এখন অবসর পাই, ক্লান্তি নেই, জীবন উপভোগ করি। আমি খুশি।”

আরও পড়ুন