বয়স ১১২ বছর তবুও বিয়ে করতে চান বুড়িমা
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:২৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১১২ বছর বয়সেও বিয়ে করতে চান এক অশীতিপর বুড়িমা। যৌবন থেকে বয়সের বিভিন্ন পর্যায়ে ইতোপূর্বে তিনি ৭টি বিয়ে করেছেন। এখন আবার নতুন করে বিয়ে করতে চান এই বৃদ্ধা।
অতীতে যে বিয়েগুলো করেছিলেন, সেইসব সংসারে তার পাঁচটি সন্তান এবং ১৯ জন নাতি-নাতনি রয়েছে। এখানেই গল্পের শেষ নয়। নাতি-নাতনিদেরও রয়েছে ৩০জন সন্তান।
নিউজ১৮-এর এক খবর থেকে জানা যায়, সেঞ্চুরিয়ান এই দাদিমার নাম সিতি হাওয়া হুসেন। মালয়েশিয়ার কেলানটানের টুম্পাটের কাম্পুং কাজাং সেবিডাং-এ তিনি বাস করেন।
যে বয়সে তার বেঁচে থাকাই বিরল ঘটনা। সেই বয়স তার মনকে হার মানাতে পারেনি। আরও অনেকদিন বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছে তার। এখনও তিনি সুস্থ ও বেশ শক্ত সমর্থ্য আছেন। লাঠি কিংবা কারও সাহায্য ছাড়াই তিনি একা হাঁটতে-চলতে পারেন। সব রকম কাজও করতে পারেন।
কিন্তু তিনি একাকিত্বে ভোগেন সব সময়। এর কারণ আসলে তার প্রিয়জনদের মধ্যে বেশিরভাগই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার ভাই বোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সমবয়সী কেউ এখন আর বেঁচে নেই। সিতি বলেছেন, এই বয়সেও তিনি কীভাবে বেঁচে রয়েছেন, তা নিয়ে তিনি নিজেই বিস্মিত।
জীবন সায়াহ্নে এসে নতুন করে বিয়ে করতে চাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, শুধু একাকীত্ব কাটাতেই আমি বিয়ে করতে চাই।
হারিয়ান মেট্রো জানায়, তার জটিল কোন শারীরিক সমস্যা না থাকলেও তিনি নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের ওষুধও খান। এবং এটি তিনি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। একটি অসাধারণ রুটিন তিনি মেনে চলেন। নিষ্ঠার সাথে পাঁচবার নামাজ পড়েন।
পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তার ছোটখাটো কিছু সমস্যা রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জগুলি হচ্ছে, সামান্য শ্রবণশক্তি হ্রাস ও ঝাপসা দৃষ্টি। শতবর্ষী এই নারী তার দীর্ঘায়ুর কোনও নির্দিষ্ট রহস্য দাবি করেন না। তবে ভাত খাওয়ার সময় তিনি পানি খান না।
অনেকে মনে করেন, এ কারণেই তিনি হয়তো দীর্ঘজীবী হয়েছেন। কিন্তু এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তার চিকিৎসকরা বলেছেন, ভাত খাওয়ার সময় পানি না খাওয়া কাউকে দীর্ঘজীবী করতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও কুসংস্কার ছাড়া কিছু নয়।
সাধারণত সিতি হাওয়া সারাদিন বিছানাতেই কাটান। দর্শনার্থীদের সাথে উষ্ণভাবে মেলামেশাও করেন। তার ৪৭ বছর বয়সী পুত্রবধূ জয়নুরা আরিফিনের মতে, তিনি খুব শান্ত স্বভাবের। তবে বয়সের কারণে মাঝে মাঝে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা আছে। কিন্তু তিনি স্বাধীনভাবে ভাত ও পানি খেতে পারেন। কাউকে সাহায্য করতে হয় না।
ধীরে ধীরে হলেও একাই তিনি টয়লেটে যেতে পারেন। তার কনিষ্ঠ পুত্র আলী বলেছেন, কিছু স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া সত্ত্বেও তার নাতি-নাতনিদের কাছে ঐতিহাসিক ঘটনা; যেমন, জাপানি উপনিবেশের সময়কাল স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারেন।
চায়না প্রেস জানায়, সিতি হাওয়ার সাতটি বিয়ের মাধ্যমে জন্ম দেয়া সন্তানদের বয়স ৫৮ থেকে ৬৫ বছর। কসমোর রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে তার ছোট ছেলে ও পুত্রবধূর সাথে সিতি হাওয়া বাস করছেন। সিতি আনন্দের সাথে বলেছেন, কেউ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি পুনরায় বিয়ে করতে রাজি আছেন।
বাতুতা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস এসডিএন ডট বিএইচডি-এর একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি জানান, তার সাত স্বামীর মধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন। অন্যদের সাথে তার মতের মিল না হওয়ায় বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে।
বিরল বার্ধক্য সত্ত্বেও সিতি হাওয়া তার স্বাস্থ্য ঠিক রেখেছেন। কিন্তু কোন সঙ্গী না থাকায় তিনি নিজেকে একাকী বোধ করেন। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, বার্ধক্যে সবারই এমন লাগে। তাই প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছে সব সময় কাউকে থাকা প্রয়োজন। গল্প করতে ও মনের ভাব আদান প্রদান করতে পারলে তারা মানসিকভাবে ভালো থাকেন।
উন্নত বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তিরা সরকারি ওল্ড হোমে থাকেন। সেখানে তারা সার্বক্ষণিক সেবা পান। সারাদিন গল্প গুজব করে তাদের সময় কাটে। কিন্তু অনুন্নত দেশগুলোয় এটি এখনো গড়ে ওঠেনি। তাই বৃদ্ধ ব্যক্তিদের পরিবার ও সমাজের বোঝা মনে করা হয়। সরকার প্রবীণদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলে তাদের এই সমস্যাটির সমাধান হতে পারে।