মাদাগাস্কারে ‘সেনা বিদ্রোহে’ অস্থিরতা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:২৯, ১২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২১:৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৫

মাদাগাস্কারে ফের রাজনৈতিক অস্থিরতার ঘনঘটা। দেশটির প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোলিনা অভিযোগ করেছেন, একটি শক্তিশালী সেনা ইউনিট দেশের ক্ষমতা অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে দখলের চেষ্টা করছে। রাজধানী আন্তানানারিভোতে সেনা বিদ্রোহ, বিক্ষোভ ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।
রবিবার সকালে প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “গণপ্রজাতন্ত্রের ভূখণ্ডে এই মুহূর্তে সংবিধান ও গণতান্ত্রিক নীতিমালা লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলছে।”
রাজোলিনা এই পদক্ষেপকে “দেশ অস্থিতিশীল করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি সেনা, পুলিশ ও সাধারণ নাগরিকদের সংবিধান রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে সেনাবাহিনীর একটি প্রভাবশালী ইউনিট ক্যাপসেট ঘোষণা দিয়েছে যে তারা ইতিমধ্যেই স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। তাদের দাবি, দেশের সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্ব এখন তাদের হাতে এবং নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল ডেমোস্থেন পিকুলাসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই ক্যাপসেটই ২০০৯ সালের মাদাগাস্কার সংকটে মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন, যার পরিণতিতে তখনকার মেয়র রাজোলিনা ক্ষমতায় ওঠেন।
শনিবার রাত থেকেই রাজধানী আন্তানানারিভোতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রথমে জল ও বিদ্যুৎ সংকটের প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন দুর্নীতি, বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে ক্যাপসেট ঘাঁটির ভেতরে গুলি বিনিময়ের শব্দ শোনা যায়, যখন জেন্ডারমেরি কর্মকর্তারা সেখানে আলোচনার জন্য যান। বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে কিছু সৈন্য নিজেদের ব্যারাক ছেড়ে রাজধানীর টাউন হলে চলে আসেন।
জাতিসংঘ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সহিংসতায় অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে।
এক সপ্তাহ আগেই রাজোলিনা নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেনা কর্মকর্তা রুফিন ফর্তুনাত জাফিসাম্বোকে নিয়োগ দেন, যিনি এখনও সরকার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করছেন। তিনি দেশের সব পক্ষকে “সংলাপ ও ঐক্যের মাধ্যমে সংকট নিরসনের” আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ ও আফ্রিকান ইউনিয়ন উভয়েই সেনাদের “সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপ থেকে সরে আসার” আহ্বান জানিয়েছে।
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “মাদাগাস্কারের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য নির্বাচিত সরকারের বৈধতা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
মাদাগাস্কার ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত। শুরুটা হয়েছিল পানি ও বিদ্যুৎ সংকটের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ দিয়ে। পরে সেই আন্দোলন রূপ নেয় সরকারের দুর্নীতি, বেকারত্ব ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণবিক্ষোভে।
রাজোলিনা ২০০৯ সালেও ক্ষমতায় এসেছিলেন একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। এবারের ঘটনাপ্রবাহ যেন সেই অতীতের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা জাগাচ্ছে।
রাজোলিনা সরকারের ওপর জনগণের আস্থা ক্রমেই ক্ষীণ হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল, অর্থনীতি নাজুক এবং বিদ্যুৎ সংকটের সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর একটি অংশ বিদ্রোহে নামা অনেককে ২০০৯ সালের মতো নতুন ক্ষমতা পরিবর্তনের আশঙ্কা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি