বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

| ১ কার্তিক ১৪৩২

বিরল ঐক্য

ট্রাম্পের বাগরাম ঘাঁটি দখলচেষ্টার বিরুদ্ধে একজোট ভারত-পাকিস্তান-চীন-রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক 

প্রকাশ: ২০:১৬, ৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০২:১২, ৯ অক্টোবর ২০২৫

ট্রাম্পের বাগরাম ঘাঁটি দখলচেষ্টার বিরুদ্ধে একজোট ভারত-পাকিস্তান-চীন-রাশিয়া

রাশিয়ায় বুধবার ‘মস্কো ফরম্যাট কনসালটেশনের’ বৈঠকে যোগ দেওয়া বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারা। ছবি: রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটি পুনর্দখলের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বিরল ঐক্য দেখা গেছে এশিয়ার আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে। এমনকি দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানও এই ইস্যুতে একই অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ‘মস্কো ফরম্যাট অব কনসালটেশনস অন আফগানিস্তান’-এর সদস্য দেশগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা দেয়, “আফগানিস্তানকে স্বাধীন, ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অটল সমর্থন রয়েছে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোনো বিদেশি শক্তি যদি আফগানিস্তান বা তার আশপাশের অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে চায়, সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ এমন পদক্ষেপ আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিপন্থী।

ভারত-পাকিস্তান-চীন-রাশিয়ার এক সুর

মস্কো ফরম্যাটে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, চীন, রাশিয়া, ইরান এবং মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। চার পরাশক্তির এই অভিন্ন অবস্থানকে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশীয় প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টার বিরুদ্ধে একটি  ‘কৌশলগত প্রতিরোধ’।

ভারতের সমর্থন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ—কারণ এটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে ‘শীতল’ হয়ে পড়েছে। আগামী ৯ থেকে ১৬ অক্টোবর আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকির দিল্লি সফরও এই ভূরাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতার ইঙ্গিত বহন করছে।

আফগানিস্তানের দৃঢ় বার্তা

ট্রাম্প ২০২০ সালে বাগরাম ঘাঁটি তালেবানের হাতে হস্তান্তর করেছিলেন, যা মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পথ খুলে দিয়েছিল। সম্প্রতি তিনি ঘাঁটিটি পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং না দিলে ‘খারাপ কিছু ঘটবে’ বলে হুমকি দেন।

কিন্তু কাবুলের বর্তমান তালেবান প্রশাসন ট্রাম্পের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে—‘আফগানিস্তান একটি স্বাধীন দেশ এবং ইতিহাসে কখনো বিদেশি সামরিক উপস্থিতি গ্রহণ করেনি।’ আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুততাকি স্পষ্ট করেছেন, তাদের নীতি আফগান সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার দিকেই অটল থাকবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বিরল ঐক্য শুধু ট্রাম্পের আফগান পরিকল্পনার বিরোধিতা নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক-রাজনৈতিক প্রভাব সীমিত করার এক নতুন ধারা। বাগরাম ঘাঁটি কৌশলগতভাবে চীনের সীমান্ত থেকে মাত্র ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত—যা বেইজিং ও মস্কোর উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আফগানিস্তান এখন পরিণত হচ্ছে এশিয়ার নতুন ‘কৌশলগত ভারসাম্যের কেন্দ্রবিন্দুতে’, যেখানে পশ্চিমা আধিপত্যের বদলে আঞ্চলিক শক্তিগুলো নিজেদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌম নীতি পুনর্গঠন করছে।

সূত্র: আল জাজিরা

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন