শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

| ১ কার্তিক ১৪৩২

চীনের গুপ্তচর হুমকিতে যুক্তরাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮:৫৬, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

চীনের গুপ্তচর হুমকিতে যুক্তরাজ্য

ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৫ বলছে, চীনের রাষ্ট্রীয় এজেন্টরা প্রতিদিনই যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও গোয়েন্দা কাঠামোর জন্য হুমকি তৈরি করছে— অথচ রাজনৈতিক টানাপোড়েনে গুরুত্বপূর্ণ এক গুপ্তচর মামলা ভেঙে পড়েছে।

ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা (এমআই৫)–এর প্রধান স্যার কেন ম্যাককলাম সতর্ক করে বলেছেন, চীনা রাষ্ট্রীয় গুপ্তচররা যুক্তরাজ্যের জন্য প্রতিদিনের নিরাপত্তা হুমকি।তিনি জানান, গত সপ্তাহেই এমআই৫ জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট এক চীনা কার্যক্রম ভণ্ডুল করেছে।

তবে সম্প্রতি চীনের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এক মামলার ভাঙন “হতাশাজনক” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস গত মাসে এই মামলা বাতিল করে জানায়— প্রমাণ অপর্যাপ্ত ছিল যে চীন যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।
কিন্তু সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাথিউ কলিন্স তার সাক্ষ্যে স্পষ্ট বলেছেন— চীন “বৃহৎ পরিসরের গুপ্তচরবৃত্তি” চালাচ্ছে এবং এটি “অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় হুমকি”।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে— এত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কেন মামলা চলতে দেওয়া হলো না?
কনজারভেটিভরা অভিযোগ করছে— বর্তমান সরকার চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষায় ইচ্ছাকৃতভাবে মামলা ভেঙে দিয়েছে।

ক্রাউন প্রসিকিউশস প্রধান স্টিফেন পার্কিনসন বলেছেন, দোষ প্রমাণের প্রমাণ “মাত্র ৫ শতাংশ কম” ছিল— কিন্তু সংসদ সদস্যরা বলছেন, বিষয়টি জুরির ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল।

এখন সংসদীয় তদন্ত শুরু হয়েছে মামলা ভাঙনের কারণ অনুসন্ধানে।
ম্যাককলাম বলেন, রাষ্ট্রীয় হুমকি এখন তিন দিক থেকে আসছে— রাশিয়া, চীন ও ইরান।এমআই৫ গত এক বছরে নজরদারিতে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা ৩৫% বৃদ্ধি করেছে।এছাড়া তারা চলতি বছর ১৯টি বড় হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করেছে।

প্রথম সাক্ষ্যে অভিযুক্ত করা হয় ক্রিস্টোফার ক্যাশ (৩০) ও ক্রিস্টোফার বেরি (৩৩)-কে।

তারা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, যিনি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নিরাপত্তা কমিশনের উপপরিচালক।একবার ক্যাশ বেরিকে মেসেজে লেখেন, “তুমি এখন গুপ্তচরের এলাকায় আছো।”দু’জনই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে লেবার সরকার ক্ষমতায় আসার পর কলিন্সের সাক্ষ্যে চীনের হুমকি স্বীকার করা হলেও বলা হয়, “চীনের সঙ্গে ইতিবাচক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখাই সরকারের অঙ্গীকার।”

চীন সরকারের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট— তারা বলেছে, “চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা গুপ্তচর কাহিনি প্রচার বন্ধ করতে হবে।”সাবেক নিরাপত্তা মন্ত্রী টম টুগেনহাট, যার দলে অভিযুক্ত ক্যাশ কাজ করতেন, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“আমার অফিসে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, রাষ্ট্রীয় শত্রু তথ্য হাতিয়েছে— অথচ সরকার রাজনৈতিক খেলা খেলছে। প্রক্রিয়া নয়, ফল চাই। বলুন তো, আপনারা কার পক্ষে আছেন?”

সরকারি প্রতিমন্ত্রী ওয়ার্ড উত্তর দেন— ক্রাউন প্রসিকিউসন সার্ভিসের কাজে কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হবে না, তবে আমরা তাদের পূর্ণ সহায়তা দেব।”
ক্রাউন প্রসিকিউসন সার্ভিস ব্যাখ্যা দিয়েছে, সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে “চীনকে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি ঘোষণা” করা প্রমাণ না পাওয়ায় মামলাটি চলতে পারেনি।

যদিও অভিযোগ গঠনের সময় পর্যাপ্ত প্রমাণ ছিল, পরবর্তী এক মামলার নজির অনুযায়ী তখনকার সরকারকে চীনকে হুমকি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হতো।
এই ঘটনার পেছনে মূল প্রশ্ন হলো—যুক্তরাজ্য কি চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে নিজের নিরাপত্তা নীতিকে দুর্বল করছে?

বিশ্লেষকদের মতে, লেবার সরকার চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার কূটনৈতিক কৌশল নিতে গিয়ে “গোপন নিরাপত্তা যুদ্ধের” বাস্তবতাকে কম গুরুত্ব দিয়েছে।
এদিকে এমআই৫ প্রধানের বক্তব্যে স্পষ্ট, রাষ্ট্রীয় গুপ্তচরবৃত্তি এখন কেবল ডিজিটাল নয়— রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপেরও অংশ হয়ে উঠেছে। সূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন