কেন অস্ত্রোপচারের আগে রোগীকে কিছু খেতে দেওয়া হয় না
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:২৩, ১১ অক্টোবর ২০২৫

অস্ত্রোপচারের আগে প্রায় সব রোগীকেই বলা হয়— নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কিছুই খাওয়া বা পান করা যাবে না। অনেক সময় এই সময়সীমা আট থেকে বারো ঘণ্টা পর্যন্ত হয়। প্রশ্ন জাগে, কেন এই কড়াকড়ি? খালি পেটে কি শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে না? আসলে এই নিয়ম শুধু প্রথাগত নয়— বরং জীবনরক্ষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সামান্য অসাবধানতাও এখানে প্রাণঘাতী বিপদ ডেকে আনতে পারে।
অ্যানেস্থেসিয়া ও এর প্রভাব: মূল কারণ
বড় অস্ত্রোপচারে রোগীকে অচেতন রাখতে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়। এই ওষুধ কেবল মস্তিষ্ককেই নয়, শরীরের সব মাংসপেশিকেও শিথিল করে দেয়। এর ফলে খাদ্যনালী ও শ্বাসনালীর সংযোগস্থলের পেশিও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
সাধারণ অবস্থায় খাদ্যনালীর উপরের দিকে থাকা একটি ভাল্ভ (ইসোফেগাল স্ফিংটার) পাকস্থলী থেকে খাবার বা অ্যাসিড উপরে উঠতে বাধা দেয়। একইভাবে, শ্বাসনালীর প্রতিরোধ ব্যবস্থা ফুসফুসকে সুরক্ষিত রাখে। কিন্তু অ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাবে এই দুটি রক্ষাকবচই কার্যত নিস্তেজ হয়ে যায়।
‘পালমোনারি অ্যাসপিরেশন’— বিপদের অন্য নাম
যদি রোগীর পাকস্থলীতে খাবার বা পানীয় থাকে, অচেতন অবস্থায় তা খাদ্যনালী বেয়ে উপরে উঠে এসে শ্বাসনালীতে ঢুকে যেতে পারে। এই ঘটনাকে বলে ‘পালমোনারি অ্যাসপিরেশন’।
ফুসফুসে পৌঁছে পাকস্থলীর অ্যাসিড নরম টিস্যুগুলো পুড়িয়ে দেয়, সৃষ্টি করে রাসায়নিক প্রদাহ বা নিউমোনাইটিস। আবার খাবারকণার জীবাণু থেকে দেখা দিতে পারে ভয়াবহ অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া। এতে শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিকল হয়ে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে।
চিকিৎসকদের সতর্কতা ও পরামর্শ
অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা বলেন, অস্ত্রোপচারের আগে খালি পেটে থাকা রোগীর সুরক্ষার জন্য সবচেয়ে জরুরি ধাপগুলির একটি। কেউ ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেললে অস্ত্রোপচার স্থগিত করাই নিরাপদ।
সাধারণত ৬–৮ ঘণ্টা আগে থেকে কঠিন খাবার বন্ধ রাখতে বলা হয়। চা, কফি, দুধের মতো পানীয়ও নিষিদ্ধ। তবে অস্ত্রোপচারের ২–৩ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত স্বচ্ছ তরল (যেমন জল) পান করা অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদিত— তা নির্ভর করে রোগীর অবস্থা ও অস্ত্রোপচারের ধরন অনুযায়ী।
অপারেশনের আগে খালি পেটে থাকা আসলে রোগীর ফুসফুসকে সুরক্ষিত রাখে ও সার্জারিকে করে তোলে নিরাপদ। তাই চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলা শুধু নিয়ম নয়— এটি নিজের জীবন রক্ষার এক অপরিহার্য শর্ত।