এইমসের গবেষণা
মোবাইল ও দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার অভ্যাসে বিপদে কিশোর-কিশোরীরা
জীবনযাপন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:২০, ১১ অক্টোবর ২০২৫

মোবাইল ফোনে ঘাড় গুঁজে থাকা, ক্লাসরুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একইভাবে বসে থাকা, কিংবা খেলাধুলার আগে শরীর গরম না করা—এই সব অভ্যাসই কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের জন্য হয়ে উঠছে মারাত্মক বিপদসংকেত।
ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে উদ্বেগজনক এক তথ্য—কৈশোরেই তাদের শরীর দেখাতে শুরু করেছে আসন্ন শারীরিক বিপদের লক্ষণ।
গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর অর্থায়নে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে সামনের দিকে ঝুঁকে থাকার ভঙ্গি, পিঠ ও কোমরের ব্যথা, এবং শরীরের নমনীয়তা হারানোর মতো সমস্যা।
গবেষক দলের সদস্যদের মতে, “আজকের জীবনযাত্রাই এই সমস্যার মূল কারণ—মোবাইল ও কম্পিউটারে দীর্ঘ সময় কাটানো, মাঠে না যাওয়া, খালি পায়ে হাঁটাচলার অভ্যাস হারিয়ে ফেলা।”
দীর্ঘক্ষণ একইভাবে বসে থাকা—চাই সেটা বইয়ের সামনে হোক, কিংবা মোবাইলের পর্দায়—মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। এতে অল্প বয়সেই তৈরি হচ্ছে স্পাইনাল স্ট্রেস বা মাসল স্টিফনেস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসময় ভারতীয় সমাজে প্রচলিত উবু হয়ে বসা, কিংবা ভারতীয় শৌচাগার ব্যবহারের মতো সহজাত শারীরিক অভ্যাসগুলো শরীরের নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করত। এখনকার প্রজন্মে সেইসব অভ্যাস বিলুপ্তপ্রায়, যার ফলেই কিশোর শরীরে দেখা দিচ্ছে অল্প বয়সের postural disorder।
এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এইমস-এর জেপিএনএ ট্রমা সেন্টারের অধ্যাপক ড. সমর্থ মিত্তল, সঙ্গে রয়েছেন ফিজিওথেরাপিস্ট ড. এ. এস. মূর্তি। তাদের লক্ষ্য—ফিজিওথেরাপি ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে এই শারীরিক প্রবণতা বদলানো সম্ভব কি না তা যাচাই করা।
১২ সপ্তাহের পরীক্ষায় দেখা গেছে, ফিজিওথেরাপি-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চা, শক্তি ও নমনীয়তায় দৃশ্যমান উন্নতি ঘটেছে। এখন চলছে ২৪ সপ্তাহের ফলো-আপ পর্ব, যাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পরিমাপ করা হচ্ছে।
গবেষক দলের মন্তব্য, “কৈশোরে হয়তো এই সমস্যাগুলির তীব্রতা বোঝা যায় না, কিন্তু শরীর ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
তাদের মতে, নিয়মিত খেলাধুলা, ব্যায়ামের আগে গা গরম করা , খালি পায়ে মাঠে হাঁটা, স্ক্রিন টাইম কমানো এবং মাঝে মাঝে উবু হয়ে বসার মতো সহজ অভ্যাস শরীরকে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ রাখতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা স্কুল পাঠ্যক্রমে ফিজিওথেরাপি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই সঠিক শারীরিক সচেতনতা অর্জন করবে, চোট-আঘাতও এড়ানো সম্ভব হবে।
এক গবেষকের কথায়, “আজকের এই পিঠের ব্যথা, গলা-কাঁধের টান—সবই ভবিষ্যতের দীর্ঘস্থায়ী রোগের সূচনা। কৈশোরেই যদি শরীরচর্চা ও সচেতনতার অভ্যাস গড়ে ওঠে, তবে প্রাপ্তবয়স্ক জীবন অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হবে।”