বাতের ব্যথায় বেশি কাবু হন নারীরা
কারণ হরমোন ও জীবনযাপন
জীবনযাপন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:০৯, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

বয়স চল্লিশ পেরোতেই শরীরের নানা অঙ্গে ব্যথা, বিশেষ করে হাঁটু, কোমর, ও আঙুলের জোড়ায় জোড়ায় ব্যথায় ভোগেন অনেক নারী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—পুরুষদের তুলনায় নারীরা বাত বা আর্থ্রাইটিসে অনেক বেশি আক্রান্ত হন। এর মূল কারণ হিসেবে তারা হরমোন, গর্ভধারণজনিত পরিবর্তন, ওজন বৃদ্ধি এবং হাড়ের গঠনতন্ত্রকে দায়ী করছেন।
হরমোনের প্রভাব
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। মেনোপজের পর এই মাত্রা হঠাৎ কমে গিয়ে হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস করে। চিকিৎসকদের মতে, এই কারণেই নারীরা অল্প বয়সেই অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথায় আক্রান্ত হন।
অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া
নারীদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয় থাকে, ফলে সংক্রমণ প্রতিরোধে তারা এগিয়ে। কিন্তু এর উল্টো দিকও আছে—এই ইমিউন সিস্টেম কখনও কখনও নিজের শরীরকেই আক্রমণ করে। এই অবস্থাকে বলে অটোইমিউন রেসপন্স, যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো জটিল বাতজনিত রোগের সূত্রপাত ঘটায়।
হাড়ের গঠন ও অস্থিসন্ধির ভূমিকা
জন্মগতভাবেই নারীদের অস্থিসন্ধি পুরুষদের তুলনায় বেশি নমনীয় এবং পেলভিক হাড়ের গঠন তুলনামূলক চওড়া। ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে হাঁটু ও কোমরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এর সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি যুক্ত হলে আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
সন্তানধারণ ও পরবর্তী প্রভাব
গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবের সময় শরীরে হরমোনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। গর্ভকালীন সময়ে কোমর, নিতম্ব ও হাঁটুর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা হাড়ের দুর্বলতা বাড়ায়। সন্তান জন্মের পর এই প্রভাব অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়, বিশেষ করে শরীরচর্চার অভাবে।
ওজন বৃদ্ধি ও অচল জীবনধারা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়তি ওজনই বাতের ব্যথা বাড়ার অন্যতম কারণ। নারীদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে শরীরের নিচের অংশ ভারী হয়ে যায়, যার ফলে হাঁটু ও কোমরের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. রুহুল আমিন সমাজকালকে বলেন, “নারীদের জন্য হরমোন, গর্ভধারণ ও ওজন—এই তিনটি ফ্যাক্টরই বাতের ঝুঁকি বাড়ায়। মেনোপজের পর নিয়মিত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং হালকা ব্যায়াম এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।”
প্রতিরোধের উপায়
নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাচলা
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ
পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানো।