পাঁচ ইসলামি ব্যাংক একীভূতকরণে
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসির চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬:৪২, ১২ অক্টোবর ২০২৫

দুর্বল ও তারল্যসংকটে থাকা পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও সরকার আমানতকারীদের সম্পূর্ণ সুরক্ষার আশ্বাস দিয়েছে, তবে সাধারণ বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কোনও স্পষ্ট নির্দেশনা এখনো নেই। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি পাঠিয়েছে।
জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে গভর্নরের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বিএসইসি একাধিক প্রস্তাব দিয়েছে, যার লক্ষ্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকারীদের ন্যায্যতা ও আর্থিক অধিকার নিশ্চিত করা।
‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুযায়ী, একীভূত প্রক্রিয়ায় সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না। নতুন ব্যাংক গঠনের সময় বিদ্যমান শেয়ার বাতিল করে নতুন শেয়ার ইস্যু করা হবে। ফলে পূর্বের বিনিয়োগকারীরা নতুন প্রতিষ্ঠানে অংশীদার হবেন না।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সংকটে থাকা এই ব্যাংকগুলোর দায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নয়, বরং উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের। তাই বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় দায়ী ব্যক্তিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিপূরণের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিএসইসি নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো দিয়েছে—লাইসেন্স, ব্র্যান্ড ভ্যালু, শাখা নেটওয়ার্ক ও মানবসম্পদসহ সব আর্থিক সম্পদের মূল্যায়ন করে বিনিয়োগকারীদের অংশ নির্ধারণ।দায়ী পরিচালকদের জামানত ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সেই অর্থের অংশ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণে ব্যবহার।দায়ী ব্যক্তিদের শেয়ার বাদ দিয়ে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগকে ন্যূনতম মূল্যে প্রতিফলিত করার অনুপাত নির্ধারণ।
বিনিয়োগকারীদের অংশীদারিত্ব নির্ধারণ ও ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলোকে তালিকাচ্যুত না করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী,ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত হবে নতুন ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’।
অনুমোদিত মূলধন: ৪০ হাজার কোটি টাকা
পরিশোধিত মূলধন: ৩৫ হাজার কোটি টাকা
এর মধ্যে সরকার দেবে ২০ হাজার কোটি টাকা — অর্ধেক নগদ ও অর্ধেক সুকুক বন্ডের মাধ্যমে।
প্রাথমিকভাবে এটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হবে, পরে ধীরে ধীরে বেসরকারি খাতে মালিকানা হস্তান্তর করা হবে।
একীভূত ব্যাংক পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ নির্বাহী পরিচালক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাবেন। তাদের সহযোগিতায় প্রতিটি ব্যাংকে আরও চারজন করে কর্মকর্তা কাজ করবেন।এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস ডিভিশন (এফআইডি) একীভূতকরণ বাস্তবায়নে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, যদিও সেখানে বিএসইসির কোনো প্রতিনিধি নেই।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাগ্রস্ত নয়টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, কিন্তু এ বিষয়ে বিএসইসির সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক পরামর্শ করা হয়নি।
বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন,“একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের আইনগত অধিকার যেন সুরক্ষিত থাকে, সেই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে।”