পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াজির মোহাম্মদ আর নেই
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:১৩, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

ছবি : জিটিভি নিউজ থেকে নেয়া
পাকিস্তান ক্রিকেটের শুরুর যুগের অন্যতম স্তম্ভ, ওয়াজির মোহাম্মদ আর নেই। ৯৫ বছর বয়সে তিনি বার্মিংহামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) তার মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেন।
ওয়াজির ছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের সূচনালগ্নের অন্যতম নায়ক। তার নেতৃত্বে ও উপস্থিতিতে পাকিস্তান টেস্ট অঙ্গনে আত্মপ্রকাশের পর ধীরে ধীরে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। পরিবারের ক্রিকেট ঐতিহ্যে তিনি ছিলেন এক অগ্রদূত; তার ভাইদের মধ্যে হানিফ, মুশতাক ও সাদিক মোহাম্মদ জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেললেও, বড় ভাই ওয়াজির ছিলেন সেই প্রজন্মের পথপ্রদর্শক। ছোট ভাই রঈস মোহাম্মদও জাতীয় দলে জায়গা পাননি, তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছিলেন পরিচিত মুখ।
১৯৫৪ সালে ইংল্যান্ডের দ্য ওভালে পাকিস্তানের প্রথম ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ওয়াজিরের। দ্বিতীয় ইনিংসে দল যখন কঠিন পরিস্থিতিতে, তখন নিচের সারির ব্যাটার হয়েও চার ঘণ্টার ব্যাটিংয়ে অপরাজিত ৪২ রান করেন তিনি। সেই ইনিংসের উপর ভর করেই পাকিস্তান মাত্র ২৪ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে রচনা করে ইতিহাস।
দুই বছর পর ১৯৫৬ সালে করাচিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি আরেকটি উজ্জ্বল ইনিংস খেলেন। অধিনায়ক আবদুল হাফিজ কারদার–এর সঙ্গে গড়েন ১০৪ রানের জুটি, করেন ৬৭ রান—যা পাকিস্তানের সেই জয়ে ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
কিন্তু তার সেরা সময় আসে ১৯৫৭–৫৮ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। হানিফ মোহাম্মদের ৩৩৭ রানের কিংবদন্তি ইনিংসের ছায়াতেও ওয়াজিরের পারফরম্যান্স আলো ছড়ায়। সিরিজজুড়ে করেন ৪৪০ রান, দুটি শতক ও একটি অপরাজিত ৯৭সহ। পোর্ট অব স্পেনে তার ১৮৯ রানের ইনিংস পাকিস্তানকে এনে দেয় বিদেশের মাটিতে আরেকটি ঐতিহাসিক জয়।
২০ টেস্টে গড় ছিল ২৭.৬২, কিন্তু তার প্রকৃত প্রভাব সেই সংখ্যার চেয়ে বহুগুণ বেশি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ৪০ গড়ের ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। ক্রিকেট ইতিহাস ও পরিসংখ্যানের বিষয়ে ওয়াজির ছিলেন এক জীবন্ত বিশ্বকোষ—সহখেলোয়াড়দের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘উইজডেন’ নামে।
১৯৬৪ সাল পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে অবসর নেন তিনি। পরবর্তী সময়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ইংল্যান্ডে।
ওয়াজির মোহাম্মদের মৃত্যুতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড গভীর শোক প্রকাশ করেছে। প্রাক্তন অধিনায়ক ও সমসাময়িকরা তাকে স্মরণ করেছেন “পাকিস্তান ক্রিকেটের প্রথম প্রজন্মের স্থপতি” হিসেবে, যিনি দৃঢ় মনোবল, নিখুঁত টেকনিক ও দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসা দিয়ে ক্রিকেটকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।