বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

| ১৫ কার্তিক ১৪৩২

অক্ষত মিলল ডাইনোসরের ডিম, ফিরল ‘জুরাসিক পার্কের’ স্বপ্ন!

বিজ্ঞান ডেস্ক

প্রকাশ: ২০:৪৬, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:০৭, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

অক্ষত মিলল ডাইনোসরের ডিম, ফিরল ‘জুরাসিক পার্কের’ স্বপ্ন!

সরাসরি সম্প্রচারের সময় পাওয়া ডাইনোসরের ডিম। ছবি : কনিসেট

মানবসভ্যতার ইতিহাসে বিরল এক নিখুঁত প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার। দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনার প্যাটাগোনিয়ায় জীবাশ্মবিদদের এক দল সম্প্রতি একেবারে অক্ষত ডাইনোসরের ডিম উদ্ধার করেছে; যা ক্রেটেশিয়াস যুগের বলে ধারণা করা হচ্ছে—অর্থাৎ ৭ কোটি বছরের পুরনো!

গবেষকদের কাছে বিস্ময়ের বিষয়, ডিমটির খোলস সম্পূর্ণ অক্ষত এবং এতে দৃশ্যমান কোনো ফাটল নেই। ফলে ধারণা করা হচ্ছে—এর ভেতরে হয়তো একটি ভ্রূণও সংরক্ষিত রয়েছে, যা জীবাশ্মবিজ্ঞানের ইতিহাসে যুগান্তকারী অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে!

‘মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল সায়েন্সেস’-এর গবেষক দলটি জানিয়েছে, এটি সম্ভবত ‘বোনাপার্টেনিকাস’ গণের কোনো মাংসাশী ডাইনোসরের ডিম। এই প্রজাতি ক্রেটেশিয়াস যুগের শেষ ভাগে পৃথিবীতে বিচরণ করত।

গবেষক গঞ্জালো মুনোজ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিককে বলেন, “এটা আমাদের কাছে এক চূড়ান্ত বিস্ময়। মাংসাশী ডাইনোসরের ডিম এমন নিখুঁত অবস্থায় পাওয়া প্রায় অকল্পনীয়।”

মাংসাশী ডাইনোসরের ডিম সাধারণত পাতলা খোলসযুক্ত হওয়ায় সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই এমন ডিমের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার জীবাশ্মবিদদের কাছে রীতিমতো ‘বৈজ্ঞানিক সোনার খনি’।

ডিমের ভেতরে যদি কার্যকর কোনো ডিএনএ বা ভ্রূণীয় অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়, তবে সেটি হতে পারে জীবন্ত ডাইনোসর ফিরিয়ে আনার পথে প্রথম পদক্ষেপ। যদিও টেক্সাসের বিজ্ঞানীরা আগে জানিয়েছিলেন, ডাইনোসর পুনর্জীবনের কোনো প্রকল্প তাদের পরিকল্পনায় নেই—তবু এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের পর ‘জুরাসিক পার্ক’-এর স্বপ্ন আবার জেগে উঠেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কও করছেন—এমন ডিমের জিনগত পুনর্গঠন প্রযুক্তিগতভাবে এখনো অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ।

ডিমটি উদ্ধার অভিযানের মুহূর্তটি লাইভ স্ট্রিম করা হয়েছিল। ফলে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি দর্শক এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়। অভিযানের প্রধান ফেদেরিকো অ্যাগনোলিন বলেন, “বিজ্ঞানের শক্তি এখন শুধু ল্যাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তা বিশ্বজনীন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।”

ডিমটি বর্তমানে আর্জেন্টিনার মিউজিয়ামে সংরক্ষিত। স্ক্যান ও মাইক্রোফসিল বিশ্লেষণ শেষে এটি প্যাটাগোনিয়ার একটি জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে, যাতে সাধারণ মানুষও ৭ কোটি বছরের এই বিস্ময় প্রত্যক্ষ করতে পারেন।

এই আবিষ্কার শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক নয়, বিবর্তনবিজ্ঞানেরও এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। যদি ভ্রূণ শনাক্ত করা যায়, তবে বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন—মাংসাশী ডাইনোসরের ডিম ফোটার প্রক্রিয়া কেমন ছিল, ডাইনোসরদের প্রজনন কাঠামো কেমন ছিল, এবং আধুনিক সরীসৃপদের সঙ্গে তাদের বিবর্তনীয় সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন