বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

| ১৫ কার্তিক ১৪৩২

মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সময় ক্ল্যারিনেট বাজালেন পারকিনসন রোগী

বিজ্ঞান ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮:২৬, ২১ অক্টোবর ২০২৫

মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সময় ক্ল্যারিনেট বাজালেন পারকিনসন রোগী

চিকিৎসা ও সঙ্গীতের এক বিস্ময়কর সংমিশ্রণ ঘটেছে যুক্তরাজ্যে। ৬৫ বছর বয়সী পারকিনসন আক্রান্ত এক নারী মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সময় ক্ল্যারিনেট বাজিয়ে চিকিৎসকদের সহায়তা করেছেন রোগের চিকিৎসা নির্ধারণে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য—অস্ত্রোপচারের মাঝেই তার হাতের আঙুলের নড়াচড়া ফিরে আসে, আর বাজনার ছন্দে মিশে যায় আরোগ্যের সুর।

রোগীর নাম ডেনিস বেকন (Denise Bacon)—ইস্ট সাসেক্সের ক্রোবোরো এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট। ২০১৪ সাল থেকে পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে শরীরের কাঠিন্য ও গতিশক্তি হ্রাস পাওয়ায় প্রিয় ক্ল্যারিনেট বাজানোও বন্ধ হয়ে যায়।

তবে কিংস কলেজ হাসপাতালে চার ঘণ্টাব্যাপী ‘ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন (DBS)’ সার্জারির সময় বেকনকে তার ক্ল্যারিনেটসহ অপারেশন থিয়েটারে বসানো হয়। চিকিৎসক দলটি নেতৃত্ব দেন নিউরোসার্জন প্রফেসর কেয়ুমারস আশকান এমবিই ।

তিনি জানান, রোগীর সজাগ অবস্থায় ইলেকট্রোড বসানোর কাজ চলছিল, আর বেকনের বাজনার তালে-তালে চিকিৎসকরা নির্ভুলভাবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মাত্রা সমন্বয় করেন।

প্রফেসর আশকান বলেন,ইলেকট্রোড স্থাপনের পরই আমরা ডেনিসের হাতের নড়াচড়ায় তাৎক্ষণিক উন্নতি দেখতে পাই। বাম মস্তিষ্কে কারেন্ট প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে ডান হাতের কাঠিন্য কমে যায়, আর ডান মস্তিষ্কে ইলেকট্রোড বসানোর পর একই প্রভাব দেখা দেয় বাম হাতে। ক্ল্যারিনেট বাজাতে তার আঙুলগুলো যেন আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে।

অপারেশনে ব্যবহৃত হয় মাথার খুলিতে পাঁচ পেন্স মুদ্রার অর্ধেক আকৃতির ছোট ছিদ্র, যার মাধ্যমে নির্ভুল অবস্থানে ইলেকট্রোড বসানো হয়। রোগীকে স্থানীয় অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হয়, যাতে মস্তিষ্কের কাজ পর্যবেক্ষণ করা যায়।

অস্ত্রোপচারের পর উচ্ছ্বসিত ডেনিস বলেন,“স্টিমুলেশন শুরু হওয়ার পরই বুঝতে পারলাম আমার ডান হাত অনেক সহজে চলছে। ক্ল্যারিনেট বাজানোও তখন অনেক স্বচ্ছন্দ মনে হচ্ছিল। এখন হাঁটতেও আগের চেয়ে ভালো লাগছে—সাঁতার ও নাচে ফেরার অপেক্ষায় আছি।”

ডেনিসের বুকে বসানো হয়েছে একটি রিচার্জযোগ্য পালস জেনারেটর ব্যাটারি, যা প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে। এটি তার মস্তিষ্কে নিরবচ্ছিন্ন বৈদ্যুতিক সিগন্যাল পাঠাবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নিজে থেকেই মাত্রা সমন্বয় করতে পারবে।

এই ঘটনাটি শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাফল্য নয়—মানব সৃজনশীলতা ও সঙ্গীতের নিরাময়ক্ষমতার এক গভীর বার্তাও বয়ে এনেছে।
সঙ্গীত সত্যিই পারে—মনের সঙ্গে শরীরকেও আরোগ্য দিতে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন