জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নতুন বিভাজন, কমিশনের সুপারিশে বিএনপির তীব্র প্রতিক্রিয়া
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮:৪২, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের দেখা দিয়েছে নতুন টানাপোড়েন। সংবিধান ও নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ জমা দিলেও ঐকমত্যের পরিবর্তে মতবিরোধ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাবকে যেখানে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) স্বাগত জানিয়েছে, সেখানে বিএনপি এটিকে 'একতরফা ও অগ্রহণযোগ্য' বলে মন্তব্য করেছে। ফলে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে—এই প্রক্রিয়া কি সত্যিই জাতীয় ঐকমত্যের দিকে যাবে, নাকি রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তুলবে?
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন,
'আমরা শুরু থেকেই বলেছি, সংস্কার বাস্তবায়নের যে প্রক্রিয়া, সেটি দলগুলোর মধ্যে আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতে হতে হবে। কিন্তু কমিশনের সুপারিশে দেখা যাচ্ছে, ভিন্নমত উপেক্ষা করে কিছু ধারা জোর করে বসানো হয়েছে। এটি জনগণের ঐক্য নয়, সরকারের একচ্ছত্র ইচ্ছার প্রতিফলন।'
তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন এটি গণভোটের ছলে সরকারের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কৌশল। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সনদ বা সংস্কার দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সুপারিশের খসড়ায় সংসদকে একইসঙ্গে আইনসভা ও সংবিধান সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়ার যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, সেটি গণতান্ত্রিক ভারসাম্যের পরিপন্থী। এটি আগেই আলোচনায় প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলো।'
অন্যদিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, কমিশন তাড়াহুড়ো করে এমন একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সংগত নয়।
'গণভোট কবে হবে, নির্বাচন কীভাবে হবে, এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। এটা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়াবে।'
অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই প্রস্তাবকে সময়োপযোগী ও ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, রাজনৈতিক সংস্কারের কোনো পথই সহজ নয়। কমিশনের প্রস্তাব অন্তত আলোচনার নতুন দরজা খুলেছে। যারা পরিবর্তন চান, তাদের উচিত এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া।'
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আস্থার সংকট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল করিম মন্তব্য করেন,
'ঐকমত্যের জায়গায় যদি দলগুলো মুখোমুখি অবস্থান নেয়, তাহলে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ থাকবে। গণভোটের তারিখ ঘোষণার আগেই নতুন সংলাপ শুরু না হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।'
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় আলোচনার জন্য তোলা হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে বাস্তবায়নের পরবর্তী দিকনির্দেশনা আসবে।
সবশেষে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা কোনো প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে নই, কিন্তু যদি জনগণের মতামত বাদ দেওয়া হয়, তবে সেটা আর সংস্কার নয়—বরং বিভাজনের নতুন সংস্করণ।'
রাজনৈতিক মহলে এখন প্রশ্ন—এই সনদ কি সত্যিই ঐকমত্যের পথে দেশকে এগিয়ে নেবে, নাকি আরও একটি রাজনৈতিক মেরুকরণের সূচনা করবে?
