বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

| ১৪ কার্তিক ১৪৩২

পাঁচটি অণুগল্প

নাসরিন আক্তার

প্রকাশ: ০১:৫০, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

পাঁচটি অণুগল্প

রাতবিছানার আসবাব

দূর-দৃষ্টি বলতে জানালার ফাঁকে এক চিলতে আঁকাশ, রাস্তার বাঁকে একটা মুদির দোকান, একটা সেলুন, আর একটা লন্ড্রির দোকান। নিত্যদিন সে সব দোকানে খদ্দের আসা যাওয়া আর রাস্তার মোড়ে পিলারের উপরে কখনো কাক, কখনো বা এক জোড়া শালিকের খুনসুটি–সারা দিনের বিনোদন এটুকুই। দিনমান কাজ বলতে একটা তরকারি, ডাল ও ভাত করতে বড়জোড় এক ঘণ্টা, সংসারের টুকটাক কাজ সারতে আরো এক ঘণ্টা। চব্বিশ ঘণ্টার মাঝে বাইশ ঘণ্টাই ধুসর।

কিচেন ও এটাস্টবাথসহ এক কামরার ফ্ল্যাটে আসবাব বলতে একটা ছোট টেবিল, একটা খাঁট আর একটা আলমারি। এর সাথে আজকাল নিজেকেও রাতবিছানার আসবাব বলেই মনে হয় আনিকার। জীবনসঙ্গী নামধারী লোকটার বোধ দু’টাকা দামের কুলফির মতো। জীবন এখানে ফরমালিন দেওয়া মাছের চোখের মতো জেগে থাকে ঘোলাটে চোখে। পঁচা-গলা দুর্গন্ধ নয়, সোনার আদলে লোহার খাঁচায় বন্দি।

আশা

চালের আটার রুটি আর গরুর মাংস দিয়ে সকালের নাস্তা শেষ করে, ঘন লিকার করা দুধ চায়ে চুমুক দিয়েই মনে পড়লো, টেবিলের উপরে রাখা ঔষধগুলো দাঁত বের করে হাসছে। নিজের উপর চরম বিরক্তি চলে আসে রহিমা বানুর। কিইবা এমন বয়স! সবে ৫৬-এর কাছাকাছি। এখনি শরীর ওকে সঙ্গ দিতে চায় না। গাদাগাদা ঔষধ খেতে হয় সকাল-বিকাল। আর এতটাই ভুলো মন প্রায় সময়ই ভুলে যায় খেতে। বিড়বিড় করে নিজেকেই একটু বকা দেন রহিমা বানু। আর তখনি হ্যালুসিনেশন হয়, কেউ একজন সামনের চেয়ারটায় বসে বলছে— 

–বাঁচার এত শখ কেন! কি আছে দুনিয়ায়? 
রহিমা বানু মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে... 
–রঙ্গ-তামাশা আছে দুনিয়ায়। 

রঙ্গ-তামাশা আর কত দেখতে ইচ্ছা করে! বিতৃষ্ণা জাগে না?
 –না, একদমই না। 
এখনো অনেক দেখার বাকি আছে 
ছেলে বিয়া করামু। নাতি-নাতনির মুখ দেখমু। 
আয়নার সামনে খাড়ায়া নিজের চোখের নিচে ভাঁজ দেখমু। 
শরীরে চামড়া কুঁচকানো দেখমু। 
লাঠি ভরদিয়া ঠুকঠুক কইরা হাঁটমু।
খুঁকখুঁক কইরা কাশমু।
সবতেরে হাড় জ্বালানি জ্বালায়া পরে মরমু!

জীবনের এহনো অর্ধেকটাই বাকি। আজকের দুনিয়ায় সবকিছু যদি বিনিময় প্রথা হয় তাইলে, আমার স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা বিনিময় হইবো না!!

সম্পর্ক

এক ছাদ। এক বিছানা। পাশাপাশি দুটো শরীর। মাঝমাঝি যোজন যোজন দূরত্ব। দূরত্বের রাশ টেনে দাঁড়িয়ে আছে আগামী প্রজন্ম।  

কোভিড-১৯

আজ মৃত্যুকে শীতলভাবে গ্রহণ করার দিন। জীবনবীজ হাতে নিয়ে বসে আছি, রোপণের জায়গা নেই। অনুর্বর মাটিতে ছড়িয়ে আছে বিষ। 

জীবন

চলার পথে সবটাই হতাশা আর ব্যর্থতা নয়। সেখানে ছোট-ছোট সাদা জুঁইফুলও থাকে। যার স্নিগ্ধ গন্ধ বেঁচে থাকাকে মোহিত করে।

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন