এপিজে আবদুল কালামের অনুপ্রেরণামূলক ৫ বই
মুবাশ্বির ইসলাম মারুফ
প্রকাশ: ১৮:৫৪, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২০:২৫, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
এপিজে আবদুল কালাম ভারতের ইতিহাসে অনন্য অনুপ্রেরণার নাম। তার জীবনযাত্রা যেমন সংগ্রামী ছিল, তেমনি তিনি কর্মে ছিলেন উজ্জ্বল। রাষ্ট্রপতি ভবনের গম্ভীর প্রাচীর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, সবখানেই তিনি ছড়িয়েছেন উদ্দীপনার বার্তা। বিজ্ঞানী, শিক্ষক, দার্শনিক ও লেখক, সব রূপেই তিনি ছিলেন অনন্য।
১৯৯৮ সালে ভারতের পোখরান-২ পরমাণু বোমা পরীক্ষায় তিনি প্রধান সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন। ভারতের মহাকাশ কর্মসূচি ও সামরিক নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও উৎক্ষেপক যান রকেট উন্নয়নের কাজে তার অবদানের জন্য তাকে ‘মিসাইল ম্যান অব ইন্ডিয়া’ তথা 'ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব' বলা হয়।
২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই বিজ্ঞানী রাষ্ট্রনায়ক নিজের কলমকে ব্যবহার করেছিলেন এক নতুন ভারতের স্বপ্ন দেখাতে। তার লেখা বইগুলো আজও তরুণ প্রজন্মকে আত্মবিশ্বাসী, দেশপ্রেমিক ও কর্মপ্রবণ হতে অনুপ্রাণিত করে। তার লেখার ভাষা সহজ, ভাবনা গভীর। তার লেখায় আছে আত্মবিশ্বাসের বীজ। তিনি বুঝিয়েছেন, যেকোনো মানুষ যেকোনো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে, যদি সে মন থেকে চায়। এখানে তার লেখা এমন পাঁচটি বই উল্লেখ করা হলো, যা তরুণদের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে, জীবন বদলে দেয় এবং স্বপ্ন দেখায় উন্নত ভবিষ্যতের।

এক. উইংস অব ফায়ার
আত্মজীবনীমূলক এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন রামেশ্বরমে শৈশবের দরিদ্র দিনগুলো থেকে শুরু করে ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি ও বিশ্বখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার গল্প। সহলেখক অরুণ তিওয়ারির সহযোগিতায় লেখা বইটিতে আছে তার শিক্ষাজীবন, গবেষণাগার, ব্যর্থতা, অর্জন ও আত্মবিশ্বাসের গল্প। উইংস অব ফায়ারের প্রতিটি পৃষ্ঠা শেখায়, কীভাবে সীমাবদ্ধতার ভেতরে থেকেও ডানা মেলে উড়তে হয়।

দুই. ইগনাইটেড মাইন্ডস : আনলিশিং দ্য পাওয়ার উইদিন ইন্ডিয়া
তরুণদের উদ্দেশে লেখা এই বইটি যেন এক জাগরণের মন্ত্র। এখানে তিনি বলেছেন, ভারতকে উন্নত জাতিতে পরিণত করতে হলে দরকার নতুন চিন্তাধারা, ইতিবাচক মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাসী নাগরিক। তিনি বিশ্বাস করতেন, যুবসমাজই দেশের আসল শক্তি। তাদের মনেই লুকিয়ে আছে এমন আগুন, যা জ্বলে উঠলে বদলে যাবে জাতির ভবিষ্যৎ।

তিন. মাই জার্নি : ট্রান্সফর্মিং ড্রিমস ইনটু অ্যাকশনস
এই বইয়ে তিনি ফিরে গেছেন তার শৈশবে, যেখানে বাবা-মা ও শিক্ষকদের স্নেহ-নির্দেশনায় বেড়ে উঠেছেন। তিনি খোলামেলা স্বীকার করেছেন নিজের ব্যর্থতার কথা। যেমন বিমানবাহিনীতে যোগ দিতে না পারার বেদনার বিষয়টি। তবে সেই ব্যর্থতাই তাকে নতুন পথে চালিত করেছিল। বইটি শেখায়, ব্যর্থতাই সফলতার পথে প্রথম পদক্ষেপ।

চার. লার্নিং হাউ টু ফ্লাই : লাইফ লেসনস ফর দ্য ইউথ
শিক্ষক হিসেবে তার শ্রেষ্ঠ দিকটি ফুটে উঠেছে এই গ্রন্থে। এটি মূলত তার বক্তৃতা ও পরামর্শের সংকলন। এখানে তিনি বলেছেন, জীবনে স্বপ্ন দেখতে হবে। তবে শুধু স্বপ্ন দেখলেই চলবে না, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা ও অধ্যবসায় প্রয়োজন। প্রতিটি অধ্যায়ে তিনি তরুণদের আত্মবিশ্বাস, নৈতিকতা ও মানবিকতার শিক্ষা দিয়েছেন।

পাঁচ. ইন্ডিয়া ২০২০ : এ ভিশন ফর দ্য নিউ মিলেনিয়াম
সহলেখক ওয়াই. এস. রাজনের সঙ্গে রচিত এই বইয়ে তিনি উপস্থাপন করেছেন তার ভিশন ২০২০। এটি শুধু একটি পরিকল্পনা ছিল না, বরং এক বাস্তবভিত্তিক স্বপ্ন, যেখানে দেখানো হয়েছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও মানবসম্পদের সমন্বয়ে ভারত হবে আত্মনির্ভর ও উন্নত দেশ। বইটিতে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন কীভাবে সঠিক পরিকল্পনা, উদ্ভাবন ও নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি জাতি নিজেকে রূপান্তরিত করতে পারে।
এপিজে আবদুল কালামের প্রতিটি লেখাই একেকটি দিকনির্দেশনা। তার লেখা তরুণদের শেখায় আত্মবিশ্বাস, মানবিকতা ও দেশপ্রেমের অর্থ। তার বইগুলো জীবনদর্শনের শিক্ষা। তিনি তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে উৎসাহ দিয়ে বলতেন, ‘স্বপ্ন সেটা নয়, যা তুমি ঘুমিয়ে দেখো। বরং স্বপ্ন সেটা, যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।’
