রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

| ১০ কার্তিক ১৪৩২

ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১:২০, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২৩:৩৫, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, আইন কেবল নিয়মের সমষ্টি নয়; এটি জাতির নৈতিক বিবেকের প্রতিফলন। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়, আর ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আইন বিভাগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, মানবতার অবিচার ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অমানবিক প্রয়োগই একসময় জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার জন্ম দেয়।

তিনি বলেন, “যখন রাষ্ট্র নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তাদের কণ্ঠরোধ করে, তখন ন্যায়ের জন্য লড়াই করা নৈতিকভাবে অপরিহার্য হয়ে পড়ে।”

প্রধান বিচারপতি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ—উভয়ই ছিল ন্যায়, মর্যাদা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের সংগ্রাম, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে গভীরভাবে প্রোথিত।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় প্রশাসনিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, নৈতিকভাবে সাহসী ও সাংবিধানিকভাবে শক্তিশালী বিচার বিভাগ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

তিনি জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর বিচার বিভাগ সংস্কারের একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা।

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, “দুই দিন আগে ২৩ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এটি গত ১৫ মাসের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা ও বহুপক্ষীয় উদ্যোগের ফল।”

বিচার বিভাগের কাঠামোগত স্বাধীনতা টেকসই করতে পারস্পরিক সহযোগিতা, আস্থা ও দূরদর্শিতা জরুরি বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি জেলা আদালতের আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট বার, জেলা বিচারক ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান জানান।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “আইনের অধ্যয়ন কেবল পেশাগত প্রশিক্ষণ নয়, এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সাধনা। প্রত্যেক আইনজীবী ও বিচারককে মনে রাখতে হবে— প্রত্যেক আইনের পেছনে আছে একটি জীবন, প্রত্যেক রায়ের পেছনে আছে একটি ভাগ্য।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য প্রাজ্ঞ আইনবিদ তৈরি করেছে। আমি বিশ্বাস করি, এখান থেকে এমন আইনজ্ঞ তৈরি হবে যারা জ্ঞানে ও মানবিকতায় আলোকিত হবে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। বিশেষ অতিথি ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান। এ সময় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত বিষয়:

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন