রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

| ১১ কার্তিক ১৪৩২

নির্বাচনী আচরণবিধি চূড়ান্তের কাজ বাকি

আরপিও সংশোধনে কী কী পরিবর্তন এলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:১৭, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৫:০০, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

আরপিও সংশোধনে কী কী পরিবর্তন এলো

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পরই জারি হবে এ অধ্যাদেশ। তখন থেকেই অধ্যাদেশ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নির্বাচনী আইন সংস্কারের এই ধাপ শেষ হওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছে ইসি। এখন কেবল নির্বাচনী আচরণবিধি চূড়ান্তের কাজ বাকি।

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বড় পরিবর্তনের মধ্যে ফের ‘না ভোট' সংযুক্ত হয়েছে। দেড় দশক পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় যোগ হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর নাম। 

এমনকি হলফনামায় অসত্য তথ্য দিলে (ভোটে অযোগ্য এমন) নির্বাচিত হওয়ার পরও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে- এমন বিধানও যুক্ত হয়েছে সংশোধনীতে।  

সংশোধনীতে আরও এসেছে-এবারের নির্বাচনে আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামি ভোট করতে পারবেন না। প্রার্থীর জামানত বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। বিশেষ করে ‘এআই অপব্যবহার’কে নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

এ ছাড়া সংশোধনীতে আরও কিছু পরিবর্তন এসেছে।  

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন উপদেষ্টা পরিষদ। ইসি যেসব প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, তার সবগুলোই রাখা হয়েছে কি না তা অধ্যাদেশ হাতে পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যালোচনা করবে কমিশন।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতীক সংক্রান্ত নির্বাচন পরিচালনা বিধি সংশোধন করে ইসি। সংস্থাটির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরপিও সংশোধনের লক্ষ্য ঠিক করা হলেও তা বৃহস্পতিবার সরকারের সায় পেল। এখন কেবল আচরণ বিধিমালা চূড়ান্তের কাজ বাকি রইল।

মূল পরিবর্তনগুলো এক নজরে:

১. আদালত ঘোষিত ফেরারি বা পলাতক আসামি প্রার্থী হতে পারবেন না।

২. একক প্রার্থীর আসনে ‘না ভোট’ ফিরছে। 

৩. সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ ও বিমান) যুক্ত হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায়।

৪. জামানত বাড়ানো হয়েছে ২০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকায়।

৫. রাজনৈতিক দলগুলো জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে।

৬. আইটি–সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে।

৭. এআই অপব্যবহার নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

৮. ভোট কারচুপি বা যে কোন ধরণের অনিয়ম হলে প্রয়োজনে পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে ইসি।

৯. নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

আচরণ বিধিমালা চূড়ান্তের পর গেজেট

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী এখন আমরা দেখব আচরণবিধিতে কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কি না। এরপর আরপিওর সঙ্গে সমন্বয় রেখে গেজেট প্রকাশ করবে ইসি সচিবালয়।”

তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে সব আইনি প্রস্তুতি শেষ হচ্ছে। এখন প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা চলছে। আর কোনো আইনি সংস্কার বাদ রইল না।

এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, “আমরা ফেব্রুয়ারির রোজার আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে পুরো দমে প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

আরপিওর ধারা অনুযায়ী যে সব বড় পরিবর্তন হলো:

ধারা : এই ধারায় সংশোধন এনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোটে এমন বিধান ছিল। 

ধারা : এই ধারা পরিমার্জন করে ভোটকেন্দ্র (পোলিং স্টেশন) প্রস্তুতের ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হাতে রাখা হয়েছে।

ধারা : এই পরিমার্জন করে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলে তা ইসিকে অবহিত করতে হবে।

ধারা ১২: এই ধারায় যুক্ত করা হয়েছে—আদালত ঘোষিত ফেরারি বা পলাতক আসামি এবার প্রার্থী হতে পারবেন না।

সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে থাকলে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।

প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য সংক্রান্ত হলনামায় অসত্য তথ্যের প্রমাণ পেলে ভোটের পরেও ইসির ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে।

ধারা ১৩: প্রার্থী হতে জামানত ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ। আগে এর পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টাকা।

ধারা ১৪: এই ধারায় যুক্ত করা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশে ক্ষুব্ধ হলে প্রার্থী বা ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোনো সরকারি সেবাদানকরী প্রতিষ্ঠানও আপিল করার সুযোগ পাবে।

ধারা ১৯: এই ধারায় যুক্ত করা হয়েছে, একক প্রার্থী থাকলে ব্যালটে ‘না ভোট’ থাকবে; সমভোট হলে হবে পুনঃভোট।

ধারা ২০: এই ধারায় যুক্ত করা হয়েছে, জোটে নির্বাচনে অংশ নিলেও নিজ দলের প্রতীকে লড়তে হবে।

ধারা ২১: এই ধারা পরিমার্জন করে বলা হয়েছে— নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হতে হবে।

ধারা ২৫: এই ধারায় প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।

ধারা ২৬: এই ধারায় নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিধান বিলুপ্ত’ করা হয়েছে।

ধারা ২৭: এই ধারায় পোস্টাল ভোটিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। পোস্টাল ভোটের মাধ্যমে প্রবাসী, সরকারি কর্মকর্তা ও আটক ভোটারদের ভোটের সুযোগ।

ধারা ২৯: এই ধারা পরিমার্জন করে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের তালিকায় গণমাধ্যমকর্মীদের থাকার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

ধারা ৩৬: এই ধারায় ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিত থাকার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

ধারা ৩৮: সমভোট পেলে লটারির বদলে পুনঃভোট। আগে সমভোট প্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে লটারি করে একজনকে নির্বাচিত করার বিধান ছিল।

ধারা ৪৪: এই ধারায় প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ভোটার প্রতি ১০ টাকা হারে ঠিক করা হয়েছে।

ধারা ৭৩: মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, গুজব বা এআই অপব্যবহারকে নির্বাচনী অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। 

ধারা ৯১: অনিয়মে কেন্দ্র নয়, প্রয়োজন হলে পুরো আসনের ফল বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে।

আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দণ্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলের ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন