আদিবাসী যুব সম্মেলনে বক্তারা
ইতিহাস জেনে ন্যায়ের লড়াই জারি রাখুন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:১৩, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় আদিবাসী যুব সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুবদের নিজেদের ইতিহাস জেনে ও বুঝে নতুন দিনের ন্যায়, অধিকার ও মর্যাদার লড়াই-সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর আসাদগেটের সিবিসিবি সম্মেলনকেন্দ্রে দিনব্যাপী ‘পরিবর্তনের শক্তি ব্যক্তি–নেতায় নয়, সংগঠিত তরুণ সমাজের ঐক্যে নিহিত’ শীর্ষক এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরাম। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল-‘শৃঙ্খলমুক্তির সংগ্রামে আদিবাসী যুবদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিই হোক ন্যায়, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার।’
সম্মেলনের প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ’২৪- এর গণ-অভ্যুত্থান ছিল নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন। কিন্তু এত ত্যাগের পরও কৃষক-শ্রমিক-প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আজও শোষিত। রাষ্ট্রের ক্ষমতা ধনবাদী গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত, ফলে প্রকৃত গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরও পাহাড়ে মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। ভূমি অধিকার ও জীবিকার সংকটে অনেকে এলাকা ছেড়ে শহরে চলে যাচ্ছেন। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও জমি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। অথচ রাষ্ট্র এখনো এই সংকটকে জাতীয় ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করছে না।’
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে দায়িত্ব গেলে বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু ১৪ মাস পরও সেই আশার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘তারপরও আমরা আশা করতে চাই- নতুন সরকার পুরোনোদের মতো অত্যাচার, অবিচার ও বঞ্চনা জিইয়ে রাখবে না।’
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান সমাজ পরিবর্তনের নতুন শিক্ষা দিয়েছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন কেবল তাদের নয়, এটি সমগ্র সমাজের ন্যায় ও সমতার দাবি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, ‘রাষ্ট্র কখনোই আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেবে না। তরুণদের এই রাজনীতি বুঝতে হবে এবং রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে।’
লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘নিজেদের ইতিহাস জানতে হবে নিজেদের প্রবীণদের কাছ থেকে- দাদা-দাদি, তাঁতি, কৃষক, জেলে, গ্রামের মানুষের কাছ থেকে। ইতিহাস জানলে কেউ বাইরে থেকে কোনো পরিচয় চাপিয়ে দিতে পারবে না।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি আন্তনী রেমা এবং সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মণিরা ত্রিপুরা। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন ও আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
সম্মেলনে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যুব ও ছাত্র সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
