রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য
দেশে সড়কে ‘অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ’ এলাকা ১৩৯, ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ২১টি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৮, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৪:২৮, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
সারা দেশে ৩১৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ উপজেলা/থানা চিহ্নিত করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে ১৩৯টি এলাকা ‘অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ’ এবং ১৭৫টি এলাকা ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ’। অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে ২১টি ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
গত ৫ বছরে (২০২০-২০২৪) গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে ৩৭ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পেয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সংগঠনটি জানিয়েছে, দেশের ৩১৪টি এলাকার বাইরেও দুর্ঘটনা ঘটছে, তবে তা প্রতিনিয়ত নয়। মূলত যেসব এলাকায় ধারাবাহিকভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে, সেসব এলাকাকে বিবেচনায় নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশে সড়ক-মহাসড়ক বিস্তৃত ও উন্নত হওয়ার সাথে সাথে মোটরযান চলাচল বাড়ছে, বাড়ছে গতি। ফলে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারকে একটি নিরাপদ ও টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে কমিউনিটি পর্যায়ে মনোযোগ দিতে হবে।বেসরকারি সংগঠনগুলোকে এই কাজে অধিকমাত্রায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ২১
ঢাকা জেলা: রাজধানী ঢাকা ও ধামরাই। গাজীপুর: গাজীপুর সদর, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর। টাঙ্গাইল: কালিহাতী। মাদারীপুর: শিবচর ও টেকেরহাট। ফরিদপুর: ভাঙ্গা। পাবনা: ঈশ্বরদী। বগুড়া: শেরপুর। নাটোর: বড়াইগ্রাম। চট্টগ্রাম: মিরেরসরাই, পটিয়া, সীতাকুন্ডু। কক্সবাজার: চকরিয়া।চুয়াডাঙ্গা: দামুড়হুদা। বরিশাল: গৌরনদী। হবিগঞ্জ: মাধবপুর। ময়মনসিংহ: ত্রিশাল ও ভালুকা।
অতি দুর্ঘটনা প্রবণ উপজেলা/থানা: ১৩৯
ঢাকা বিভাগ
ঢাকা জেলা: রাজধানী, ধামরাই, সাভার, কেরানীগঞ্জ। মানিকগঞ্জ: সদর উপজেলা, সিঙ্গাইর, ঘিওর।গাজীপুর: সদর উপজেলা, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, টঙ্গী, কালীগঞ্জ। টাঙ্গাইল: কালিহাতী, মধুপুর, মির্জাপুর, ঘাটাইল। নারায়ণগঞ্জ: সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর, ফতুল্লা। মুন্সীগঞ্জ: গজারিয়া, শ্রীনগর। নরসিংদী: সদর উপজেলা, রায়পুরা, পলাশ। কিশোরগঞ্জ: ভৈরব ও কটিয়াদি।শরীয়তপুর: জাজিরা। মাদারীপুর: শিবচর, টেকেরহাট, কালকিনি। ফরিদপুর: সদর উপজেলা ও ভাঙ্গা। গোপালগঞ্জ: সদর উপজেলা, কাশিয়ানি, মুকসুদপুর। রাজবাড়ি: সদর উপজেলা।
চট্টগ্রাম বিভাগ
চট্টগ্রাম জেলা: মহানগর, মিরেরসরাই, সীতাকুন্ডু, পটিয়া, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, লোহাগাড়া, রাউজান। কুমিল্লা: সদর উপজেলা, দাউদকান্দি, চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং, চান্দিনা, দেবিদ্বার। চাঁদপুর: হাজীগঞ্জ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সদর উপজেলা, বিজয়নগর, সরাইল। নোয়াখালী: বেগমগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ। ফেনী: সদর উপজেলা ও দাঁগনভূইয়া। লক্ষ্মীপুর: সদর উপজেলা। কক্সবাজার: চকরিয়া ও উখিয়া।
রাজশাহী বিভাগ
রাজশাহী জেলা: সদর উপজেলা, বাঘা, পুঠিয়া। চাঁপাইনবাবগঞ্জ: শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর।সিরাজগঞ্জ: সদর উপজেলা, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, তাড়াশ। নাটোর: সদর উপজেলা, বড়াইগ্রাম, লালপুর, সিংড়া। পাবনা: ঈশ্বরদী, সাঁথিয়া, চাটমোহর। নওগাঁ: মহাদেবপুর ও মান্দা। বগুড়া: সদর উপজেলা, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ, কাহালু, আদমদীঘি, নন্দীগ্রাম। জয়পুরহাট: সদর উপজেলা।
খুলনা বিভাগ
খুলনা জেলা: খুলনা সদর ও ডুমুরিয়া। যশোর: সদর উপজেলা, অভয়নগর, চৌগাছা। সাতক্ষীরা: সদর উপজেলা। বাগেরহাট: ফকিরহাট ও মোল্লারহাট। মাগুরা: সদর উপজেলা। চুয়াডাঙ্গা: সদর উপজেলা, দামুড়হুদা, আলমডাঙ্গা। ঝিনাইদহ: সদর উপজেলা, কালীগঞ্জ, শৈলকুপা। কুষ্টিয়া: সদর উপজেলা, ভেড়ামারা, কুমারখালী। মেহেরপুর: গাংনী।
রংপুর বিভাগ
রংপুর জেলা: কাউনিয়া ও তারাগঞ্জ। দিনাজপুর: সদর উপজেলা, বিরামপুর, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর। গাইবান্ধা: গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ি। পঞ্চগড়: দেবীগঞ্জ।
বরিশাল বিভাগ
বরিশাল জেলা: বরিশাল সদর, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর। পটুয়াখালী: কলাপাড়া। ভোলা: সদর উপজেলা ও চরফ্যাশন। বরগুনা: আমতলী।
ময়মনসিংহ বিভাগ
ময়মনসিংহ জেলা: ভালুকা, ত্রিশাল, ফুলপুর, নান্দাইল, গৌরীপুর, তারাকান্দা, গফরগাঁও।নেত্রকোনা: পূর্বধলা।
সিলেট বিভাগ
সিলেট জেলা: সদর উপজেলা, জৈন্তাপুর, দক্ষিণ সুরমা, ওসমানীনগর। হবিগঞ্জ: মাধবপুর, নবীগঞ্জ, বাহুবল।
দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা: ১৭৫
ঢাকা বিভাগ
ঢাকা জেলা: নবাবগঞ্জ। মানিকগঞ্জ: সাটুরিয়া ও শিবালয়। গাজীপুর: কোনাবাড়ি ও পূবাইল।টাঙ্গাইল: সদর উপজেলা, বাসাইল, গোপালপুর, ভূঁঞাপুর, সখীপুর, ধনবাড়ি। নারায়ণগঞ্জ: আড়াইহাজার। মুন্সীগঞ্জ: সিরাজদিখান। নরসিংদী: শিবপুর, বেলাব, মাধবদী। কিশোরগঞ্জ: সদর উপজেলা, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া। শরীয়তপুর: সদর উপজেলা। মাদারীপুর: সদর উপজেলা ও রাজৈর। ফরিদপুর: বোয়ালমারী, নগরকান্দা, সালথা, মধুখালী। গোপালগঞ্জ: কোটালীপাড়া।রাজবাড়ি: গোয়ালন্দ, বালিয়াকান্দি, পাংশা, কালুখালী।
চট্টগ্রাম বিভাগ
চট্টগ্রাম জেলা: বাঁশখালী, বোয়ালখালী, সাতকানিয়া, ফটিকছড়ি, আনোয়ারা, চন্দনাইশ। কুমিল্লা: ব্রাহ্মণপাড়া, লাকসাম, লাঙ্গলকোট। চাঁদপুর: সদর উপজেলা, কচুয়া, ফরিদগঞ্জ, মতলব।ব্রাহ্মণবাড়িয়া: কসবা ও নবীনগর।নোয়াখালী: সদর উপজেলা, চাটখিল, সুবর্ণচর, সেনবাগ। ফেনী: ছাগলনাইয়া ও সোনাগাজী। লক্ষ্মীপুর: রায়পুর ও রামগতি। কক্সবাজার: রামু ও টেকনাফ।রাঙ্গামাটি: বাঘাইছড়ি, কাউখালী, সাজেক। বান্দরবান: লামা ও রুমা।
রাজশাহী বিভাগ
রাজশাহী জেলা: মোহনপুর, গোদাগাড়ি, পবা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ: সদর উপজেলা ও নাচোল।সিরাজগঞ্জ: রামগঞ্জ ও কামারখন্দ। নাটোর: বাগাতিপাড়া ও গুরুদাসপুর। পাবনা: সদর উপজেলা ও সুজানগর। নওগাঁ: সদর উপজেলা, পত্নীতলা, রানীনগর, নিয়ামতপুর। বগুড়া: ধুনট ও দুপচাচিয়া।জয়পুরহাট: পাঁচবিবি ও কালাই।
খুলনা বিভাগ
খুলনা জেলা: পাইকগাছা ও রূপসা। যশোর: মনিরামপুর, ঝিকরগাছা, কেশবপুর, শার্শা, বেনাপোল।সাতক্ষীরা: তালা, কলারোয়া, দেবহাটা, শ্যামনগর। বাগেরহাট: সদর উপজেলা, চিতলমারী, মোংলা।মাগুরা: মহম্মদপুর।নড়াইল: সদর উপজেলা ও লোহাগাড়া। চুয়াডাঙ্গা: জীবননগর। ঝিনাইদহ: মহেশপুর, কোট চাঁদপুর। কুষ্টিয়া: দৌলতপুর। মেহেরপুর: সদর উপজেলা ও মুজিবনগর।
রংপুর বিভাগ
রংপুর জেলা: সদর উপজেলা, পীরগঞ্জ, পীরগাছা, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া। দিনাজপুর: ফুলবাড়ি, ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর, পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ। গাইবান্ধা: সদর উপজেলা, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ। পঞ্চগড়: সদর উপজেলা, তেঁতুলিয়া, বোদা। লালমনিরহাট: পাটগ্রাম। নীলফামারী: সদর উপজেলা, ডোমার, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর। ঠাকুরগাও: সদর উপজেলা ও বালিয়াডাঙ্গি।কুড়িগ্রাম: সদর উপজেলা, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ি।
বরিশাল বিভাগ
বরিশাল জেলা: বাকেরগঞ্জ ও বাবুগঞ্জ। পটুয়াখালী: সদর উপজেলা, গলাচিপা, দশমিনা, বাউফল।ভোলা: লালমোহন ও দৌলতখান। ঝালকাঠি: সদর উপজেলা, নলছিটি, রাজানগর। পিরোজপুর: সদর উপজেলা, নাজিরপুর, মঠবাড়িয়া।
ময়মনসিংহ বিভাগ
ময়মনসিংহ জেলা: সদর উপজেলা, মুক্তাগাছা, ঈশ্বরগঞ্জ, হালুয়াঘাট। নেত্রকোনা: সদর উপজেলা, কমলাকান্দা, দুর্গাপুর, কেন্দুয়া, মদন, বারহাট্টা। শেরপুর: সদর উপজেলা, নকলা, শ্রীবর্দি, নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতি। জামালপুর: সদর উপজেলা, মেলান্দাহ, সরিষাবাড়ি, বকশীগঞ্জ।
সিলেট বিভাগ
সিলেট জেলা: কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, গোয়াইনঘাট। হবিগঞ্জ: শায়েস্তাগঞ্জ ও চুনারুঘাট। সুনামগঞ্জ: সদর উপজেলা, জগন্নাথপুর, দোয়ারাবাজার। মৌলভীবাজার: কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা।
কেন এসব এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ
১. এলাকার সড়কের নকশা ও অবকাঠামোগত ত্রুটি। ২. সড়কের পারিপার্শ্বিক বিরূপ অবস্থা। ৩. সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা না থাকা বা ঘাটতি (সাইন, মার্কিং, সড়ক বিভাজক, পূর্ব সতর্কতামূলক নির্দেশনা বোর্ড) ইত্যাদি না থাকা। ৪. যানবাহনের উচ্চগতি নিয়ন্ত্রণে জনবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা না থাকা। ৫. একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বাধাহীন ও বেপরোয়া চলাচল।৬. সড়কের সমস্যাক্রান্ত স্থানে যানবাহন চালনার ক্ষেত্রে চালকদের সক্ষমতার অভাব বা অদক্ষতা। ৭. সড়ক পার্শ্ববর্তী বা সড়কঘেঁষা জনবসতির মানসিকতা।
সংগঠনের সুপারিশ
১. সড়কের যেসব স্থানে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে, সেসব স্থানের নকশা ও অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান করা
২. সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘাটতি নিরসন করা
৩. যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করা
৪. একই সড়কে নানা ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধে সার্ভিস লেন অথবা সড়ক বিভাজক তৈরি করা
৫. এলাকার অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মোটরসাইকেল-সহ অন্যান্য যানবাহন চালানো বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা
৬. সড়ক পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে নিরাপদে সড়ক ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা
৭. দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানসমূহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা।
