রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

| ১০ কার্তিক ১৪৩২

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

প্রশাসন ক্যাডারের দখলদারিত্বে বৈষম্যের শিকার ২৫ ক্যাডার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬:২৫, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

প্রশাসন ক্যাডারের দখলদারিত্বে বৈষম্যের শিকার ২৫ ক্যাডার

দেশের ২৬টি বিসিএস ক্যাডারের মধ্যে প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫টি ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধায় ‘বৈষম্যের শিকার’ বলে অভিযোগ করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ’। পরিষদ প্রশাসন ক্যাডারের মতো ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি ও পূর্ণ আর্থিক সুবিধা প্রদানের দাবি জানিয়ে বলেছে, `জনপ্রশাসনে দীর্ঘদিন ধরে একচেটিয়া আধিপত্য চলছে, যা দক্ষতা ও সেবার মান কমিয়ে দিচ্ছে।‘

শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ স সংবাদ সম্মেলনে ‘বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ’ এই অভিযোগ করে। সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন পরিষদের সমন্বয়ক আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল।

তিনি বলেন,‘ বিগত সরকারের সময়ে প্রশাসন ক্যাডারের প্রায় ৭৭৮ জন কর্মকর্তা ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন, কিন্তু অন্যান্য ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা ‘অকারণে’ বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা চাই ২৫ ক্যাডারের সকল বঞ্চিত কর্মকর্তার আবেদন পুনর্বিবেচনা করা হোক এবং প্রশাসন ক্যাডারের মতো বেতন-ভাতাসহ সব আর্থিক সুবিধা দেওয়া হোক।’

সংবাদ সম্মেলনে আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল অভিযোগ করেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা এখন ‘হরফুন মৌলা বা সকল কাজের কাজী’ হয়ে সব মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে রেখেছেন। অথচ এসব পদ মূলত ‘সিনিয়র সার্ভিস পুল (১৯৭৯)’ এর অধীন ছিল। এই পদগুলো কোনো ক্যাডারের তফসিলে ছিল না। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগের নিয়ম ছিল। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডার অবস্থানগত সুবিধা নিয়ে একে একে সব পদ দখল করেছে।

পরিষদের এই সমন্বয়ক দাবি করেন, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর প্রশাসন ক্যাডার উপসচিব ও তদুর্ধ্ব পদগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের তফসিলভুক্ত করে নিয়েছে, যা অন্য ক্যাডারদের ‘বঞ্চিত ও অধীনস্ত’ অবস্থায় ফেলেছে।

এসময় ‘২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ’ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে করা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নের দাবি জানায়।

পরিষদ সমন্বয়ক জানান, জুলাই সনদের ৮৪টি সুপারিশের মধ্যে ৭টি জনপ্রশাসন সংস্কার বিষয়ক। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ গোপন রাখা হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘২৬টি কমিশন বা কমিটি গঠিত হলেও বাস্তবে সবসময় প্রশাসন ক্যাডারের স্বার্থই রক্ষা করা হয়েছে। সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস গঠন এবং উপসচিব পদে সকল ক্যাডারের জন্য খোলা প্রতিযোগিতার বিধান না আনলে প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের বিষয়েও মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল বলেন, ২০১৭ সালে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে’ এই কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয় এবং সেটিকে কেন্দ্র করেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জন্ম নেয়। শিক্ষা ক্যাডারের কাউকে বাদ রেখে গঠিত কমিটি বিষয়টি সমাধান করতে পারবে না। 

এই সমন্বয়ক বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ’ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে- জুলাই বিপ্লবের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে, ন্যায়সঙ্গত পদোন্নতি দিতে হবে এবং প্রশাসন ক্যাডারের একচেটিয়া কর্তৃত্ব ভাঙতে হবে।’
 

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন