নতুন গবেষনা
রক্ত পরীক্ষায় শনাক্ত ৫০ ধরনের ক্যান্সার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:২৫, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

ক্যান্সার শনাক্তে নতুন এক যুগের দ্বার খুলে দিতে পারে একটি সহজ রক্ত পরীক্ষা। উত্তর আমেরিকায় পরিচালিত এক বছরব্যাপী এক পরীক্ষায় দেখা গেছে—একটি মাত্র রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ৫০টিরও বেশি ধরনের ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব। এর মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ক্যান্সারেরই এখনো কোনও নিয়মিত স্ক্রিনিং ব্যবস্থা নেই।
আমেরিকার ওষুধ কোম্পানি ‘গ্রেইল’ উদ্ভাবিত এই ‘গ্যালেরি টেস্ট’) টিউমার থেকে ছুটে আসা ক্ষুদ্র ক্যান্সারজনিত ডিএনএ অংশ শনাক্ত করে। যুক্তরাজ্যে বর্তমানে এই পরীক্ষাটি এনএইচএসের আওতায়ও চলছে।
২৫ হাজার মার্কিন ও কানাডিয়ান নাগরিকের উপর চালানো পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রতি একশ’ জনের মধ্যে একজনের ফল পজিটিভ আসে। তাদের মধ্যে ৬২ শতাংশ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার পরবর্তীতে নিশ্চিত হয়।
গবেষণার নেতৃত্বে থাকা ওরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির ড. নিমা নবাবিজাদেহ বলেন, “এই রক্ত পরীক্ষা ক্যান্সার স্ক্রিনিং পদ্ধতিতে এক মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারে। এটি বহু ধরনের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সক্ষম—যখন চিকিৎসা সবচেয়ে কার্যকর।”
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, পরীক্ষাটি ৯৯ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে ভুল নেতিবাচক ফলাফল এড়াতে সক্ষম হয়েছে। প্রচলিত স্তন, অন্ত্র ও জরায়ু মুখের স্ক্রিনিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করলে সামগ্রিক শনাক্তের হার সাত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—যেসব ক্যান্সারের এখনো কোনও স্ক্রিনিং ব্যবস্থা নেই (যেমন ডিম্বাশয়, লিভার, পাকস্থলী, মূত্রথলি ও অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার), সেগুলোর তিন-চতুর্থাংশই এই পরীক্ষায় ধরা পড়েছে।
৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে পরীক্ষাটি ক্যান্সারের উৎস সঠিকভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ক্যান্সার মৃত্যুহার কমাতে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা জানতে আরও প্রমাণ প্রয়োজন। লন্ডনের ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের
প্রফেসর ক্লেয়ার টার্নবুল বলেন, “গ্যালেরি পরীক্ষার আগাম শনাক্তকরণ আসলেই মৃত্যুহার কমাতে পারবে কি না—তা জানতে র্যান্ডমাইজড ট্রায়ালের তথ্য অপরিহার্য।”
এই সপ্তাহান্তে বার্লিনে ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর মেডিক্যাল অনকোলজি কংগ্রেসে পরীক্ষার প্রাথমিক ফল প্রকাশ করা হবে। আর আগামী বছর প্রকাশ পাবে ১ লাখ ৪০
হাজার এনএইচএস রোগীকে নিয়ে পরিচালিত তিন বছরের বৃহত্তর গবেষণার ফলাফল।
ফল ইতিবাচক হলে এনএইচএস এক মিলিয়ন মানুষের মধ্যে এই পরীক্ষা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
গ্রেইলের বায়োফার্মা বিভাগের প্রেসিডেন্ট স্যার হারপাল কুমার বলেন, “অধিকাংশ মানুষ ক্যান্সারে মারা যায় কারণ রোগটি অনেক দেরিতে ধরা পড়ে। আমাদের লক্ষ্য—প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা, যখন চিকিৎসা বেশি কার্যকর ও রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা সর্বোচ্চ।”
তবে ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের নাসের তুরাবি বলেন, “অতি-নির্ণয় বা অপ্রয়োজনীয় ক্যান্সার শনাক্তকরণ এড়াতে আরও গবেষণা জরুরি। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্ক্রিনিং কমিটি এই পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, যদি এই পরীক্ষার কার্যকারিতা আরও প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি হবে ক্যান্সার শনাক্তকরণের এক ঐতিহাসিক মোড় পরিবর্তন।সূত্র : বিবিসি