সংবাদ সম্মেলন
নির্বাচনের আগে গণভোট কোনোভাবেই মানবে না বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:৪৫, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাবিত গণভোট বিএনপি কোনোভাবেই মেনে নেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে এই ঘোষণা দেয় দলটি। সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
এসময় নির্বাচনের আগে গণভোটের বিরোধিতা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই পরিষদ যদি ২৭০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ না করে, তাহলে সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে— এমন ধারণা হাস্যকর ও গণতান্ত্রিক রীতির পরিপন্থী। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিতে বিএনপি প্রস্তাব করেছে— নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন করা হোক। নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে সময়, ব্যয় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে তা যুক্তিযুক্ত।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেয়া সুপারিশে বলা হয়েছে, নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একই সঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করবেন। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা শুধু জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত সীমিত। সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের কোনো এখতিয়ার তাদের নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জাতিকে বিভক্ত করার যেকোনো পদক্ষেপ অনৈক্য সৃষ্টি করবে এবং জাতীয় জীবনে অকল্যাণ ডেকে আনবে। আমরা চাই ঐক্য, প্রতারণা নয়’।
সংস্কার বিএনপির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে বহু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে। আমরা সবসময়ই সংস্কারের পক্ষে। শহীদ জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, খালেদা জিয়ার ভিশন–২০৩০ এবং তারেক রহমানের ৩১ দফা— সবই প্রমাণ করে বিএনপি গণতান্ত্রিক সংস্কারে আন্তরিক।
মির্জা ফখরুল বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্টসহকারে ঐকমত্য হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ যে ভাবে প্রণীত হয়েছে এবং স্বাক্ষরিত হয়েছে তাতে নোট অব ডিসেন্ট এর অংশে এ বক্তব্য স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সেমতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। অতঃপর গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরিত হয়”।
ফখরুল আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সব জাতীয় অনুষ্ঠান বিটিভিসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হয়েছে, যা সমস্ত জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আমরা কেবল অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু সেদিন জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত কপি আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। পরবর্তীতে প্রিন্টেড পুস্তক হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদের কপি হাতে পাওয়ার পর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা আমাদের অগোচরে পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে। যেমন: ১। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি অফিসে টাঙানো সংক্রান্ত বিধান অনুচ্ছেদ ৪ (ক)। বিলুপ্ত করার বিষয়টি সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদিও প্রায় সকল রাজনৈতিক দল সম্মতি পত্র দিয়েছে। ২। সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ পুরোপুরি বিলুপ্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল সম্মতি প্রকাশ করলেও অগোচরে সেটা চূড়ান্ত সনদে সংশোধনী আনা হয়েছে।
বছরব্যাপী সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক আলোচনাকে অর্থহীন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, দীর্ঘ প্রায় বছরব্যাপী সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনা ছিল অর্থহীন, প্রহসনমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত থাকবে-এটাই স্বাভাবিক এবং সে কারণে সংলাপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ভিন্নমত পোষণে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকারকে আমলেই নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, সালাউদ্দিন আহমদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
