: ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতি
চট্টগ্রাম বন্দর টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরের হাতে দেওয়া যাবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫:৫০, ১৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৫৪, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া, নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও বে টার্মিনাল- এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি অপারেটরের হাতে ৩০ বছরের জন্য দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। তারা বলছে, এই সিদ্ধান্ত দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থের পরোক্ষে এবং তা অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা ও সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ সোমবার (১৩ অক্টোবর) এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরের এমন গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিলে দেশের স্বার্থ ও নিয়ন্ত্রণ বিপন্ন হবে। বন্দরকে অপারেটিভ কেবল লাভের দিক থেকে দেখা হলে সেটি ভবিষ্যতে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব-সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি করবে।”
তারা আরও জানান, শ্রমিক, পেশাজীবী ও জনসাধারণের বিরোধিতা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত এই চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে হলে জনগণের ক্ষোভ তীব্র হবে।
ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা দাবি জানিয়েছেন- চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে ও প্রয়োজনে দেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়িয়ে দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে বন্দর পরিচালনা নিশ্চিত করা হোক।
সিদ্ধান্ত না নিলে ছাত্র ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হবে; তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম লং মার্চসহ যোগ্য আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বক্তারা বলেছেন, “এই চুক্তি যদি অব্যাহত থাকে, আমরা শৃঙ্খলাবদ্ধ ও বাস্তবধর্মী আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব। কারণ দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর বিদেশি নিয়ন্ত্রণে গেলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”
ছাত্র ইউনিয়ন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে, জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কঠোর পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে চুক্তি বাতিল করা হোক এবং বন্দর ব্যবস্থাপনায় স্বল্পমেয়াদি ঋণ পড়ে থাকলে তা সমাধানের জন্য স্বচ্ছ, গণউপযোগী বিকল্প উপায় নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। তারা মনে করিয়েছে, স্থানীয় শ্রমিক ও সংস্থাগুলোকে ক্ষমতা দিয়ে, দক্ষতা বৃদ্ধি করে দেশের স্বার্থে বন্দর পরিচালনার পক্ষে সরকারি নীতিমালা তৈরির প্রয়োজন।
বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর; বাণিজ্য ও আমদানির ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। অত্যন্ত লাভজনক কন্টেইনার টার্মিনালগুলোতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ করলে আয়-ব্যয়ের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও স্থানীয় অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে- এ কারণেই রাজনৈতিক, শ্রমিক ও নাগরিক স্তরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়ন শক্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য সামাজিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলা হবে বলে জানায়। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে- চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা হলে তা নিয়ে বৃহত্তর গণআন্দোলনে যেতে হবে। তাদের আহ্বান—“সব শ্রেণির জনগণ, শ্রমিক ও ছাত্রমৈত্রীকে একতাবদ্ধ হয়ে এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য রাস্তায় নামতে”।