জাতীয় প্রেসক্লাবে অক্টোবরের শেষ বিকেল ছিল কবিতাময়
তাসকিনা ইয়াসমিন
প্রকাশ: ১৯:৪৯, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৫১, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
						
									আজ হেমন্তের অষ্টম দিন। এক রৌদ্রজ্বল দিন। স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘেদের দেখা মেলে। এমনিতে দিনটি শুক্রবার। তাই সরকারি ছুটির। আজ আমারও অফিস ছুটি। সারাদিন অবসর সময় কাটিয়ে বিকেলবেলা বাসা থেকে রওয়ানা দিলাম জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্দেশ্যে। ঢাকাইয়া টেসলাখ্যাত রিকশা নিলাম। পুরো রাস্তা ফাঁকা। খুব অল্প সময়েই পৌঁছে গেলাম প্রেস ক্লাব। উদ্দেশ্য বাংলা কবিতার সাথে বিশুদ্ধ কিছু সময় কাটানো। ঠিক চারটায় সময় দেয়া থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো বিকেল পৌনে পাঁচটায়। এর আগে নতুন-পুরনো পরিতিত-অপরিচিত কবিদের সাথে চলল কুশল বিনিময়।
আজ ছিল কবিতায় হেমন্ত শীর্ষক আলোচনা। আলোচক কবি মিলি হক। তিনি বলেন, আজ কার্তিক মাসের আট তারিখ। এখন হেমন্তকাল চলছে। বাংলা সাহিত্যের বড় কবিরা অনেকেই হেমন্তকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাসিক কবিতা পাঠের আসরে তিনি একথা বলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব কবিতাপত্র পরিষদের আয়োজনে মাসিক এ কবিতা পাঠের আসর প্রতি মাসের শেষ তারিখ অনুষ্ঠিত হয়। গত ২২ বছর ধরে এ আয়োজন চলছে৷
আলোচনায় কবি মিলি হক বলেন, জীবনানন্দ দাশের কবিতায় আমরা হেমন্তকে পেয়েছি। তার রুপসী বাংলা গ্রন্থে তিনি হেমন্তকে অপরূপরূপে বর্ণনা করেছেন। তার লেখা " আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়- খুবই জনপ্রিয় কবিতার লইন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি সুফিয়া কামাল, কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়, কবি অরুণ কুমার দা তাদের কবিতায় হেমন্তকে নিয়ে লিখেছেন। হেমন্ত টিকে থাকুক কবিতার চরণে চরণে।
সভাপতির বক্তব্যে কবি শাহীন চৌধুরী বলেন, আজকের কবিদের পাঠ করা কবিতাগুলোর মধ্যে মোস্তফা হাবিব, লিলি শেঠ, খাতুনে জান্নাত, বজলুর রায়হানের কবিতা নিয়ে আলোচনা হয়।
শাহীন চৌধুরী বলেন, খাঁটি বাংলা শব্দ মাত্র আটটি। অথচ বাংলা শব্দ এখন ৮২ হাজার। প্রায় ৪০ % ভাষা এসেছে তৎসম শব্দ থেকে। কবিতা লিখতে গিয়ে আমরা কেন নতুন শব্দ পাব না? বাংলা এত সমৃদ্ধ হয়েছে যে আমরা সমৃ্দ্ধবান। আমাদের চারটি আসমানী কিতাবের মধ্যে তিনটি হিব্রুতে লেখা । কিন্তু সেই হিব্রুভাষা এখন হারিয়ে গেছে। '
তিনি সকল কবিকে নিয়মিত কবিতাপাঠে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
কবি শাহীন রেজা বলেন, 'এই যে ঋতুভিত্তিক দেশ। আমরা এই দেশে ছয়টা ঋতুকে উপভোগ করতে পারি। যারাই এই ঋতুগুলোকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন তাদের কবিতাগুলোকে ধরে রাখি তাহলেই আমরা প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পারব।'
কবিতাপাঠে অংশ নেন
কবি লিলি শেঠ, কবি কবির ভূইয়া, কবি শাওন আজগর, কবি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, কবি জয়নুল আবেদীন জয়, কবি শ্যামলী মণ্ডল, কবি মোস্তফা হাবীব, কবি আব্দুল মান্নান, কবি নুরুল হাসান খান, কবি তাসকিনা ইয়াসমিন, কবি শিবুকান্তি দাশ, কবি মোহাম্মদ সেলিম, কবি আয়হান সাদিক, কবি বজলুর রায়হান, কবি সাবিনা ইয়াসমিন, কবি শাহাদাত হোসেন খান, কবি আবম সালাউদ্দিন, কবি ইব্রাহীম মণ্ডল, কবি আবু হানিফা, কবি আ কা আজাদ, কবি আতিকুল ইসলাম, কবি খাতুনে জান্নাত, কবি গোলাম মাওলা শিকদার, কবি আতিকুজ্জামান খান, কবি হুমায়ুন কবির শিকদার, কবি কুতুব উদ্দিন, কবি খান কাওসার কবির, কবি রাহান তাপস, কবি মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম মনজু, কবি সবুজ মনির, কবি রীনা পণ্ডিত, কবি কামরুজ্জামান কায়েম, কবি সালাম জুবায়ের, কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ, কবি শাহীন রেজা, কবি কামার ফরিদ, কবি শাহীন চৌধুরী, কবি মিলি হক, কবি নাজমুল হাসান ও কবি মোশাররফ ইউসুফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি শাহীন চৌধুরী। উপস্থাপনা করেন কবি মোশাররফ ইউসুফ।
নভেম্বর মাসের শেষ দিন যথারীতি জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলায় মওলানা আকরম খাঁ মিলনাতনে এ কবিতাপাঠ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলা কবিতার গুণী কবিদের একাংশের সাথে কাটল একটি চমৎকার হেমন্ত সন্ধ্যা। এমন সন্ধ্যা জীবনে আাবার ফিরে আসুক - এই প্রত্যাশা।  অনুষ্ঠানের শেষে কবি আতিকুল ইসলামের জন্মদিন উদযাপন করা হয়। এাময় কবি তার সতীর্থ কবিদের নিয়ে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেন।
 
